বাংলা সাহিত্যের বিশেষ করে ৭০ দশকের অন্যতম কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। মাত্র ৩৪ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১)আয়ু নিয়ে এসেছিলেন এই পৃথিবীতে।এই অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাহিত্যঙ্গনে স্ফুলিঙ্গের মতো আবিভূত হয়ে হঠাৎ করে জীবন প্রদীপ নিভে যায়।স্বল্প সময়ে রুদ্র রেখে যায় বিশাল আকাশ...! মুক্তিযুদ্ধেরচেতনা,রাজাকারদের আস্ফালন,স্বৈরতন্ত্র সর্বোপরি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবন উপজীব্য করে রুদ্রের কবিতা জীবন্ত হয়ে উঠে।নাড়াদেয় অনুভূতির তীব্রতায়।

"জাতির পতাকা আজ খামছে ধরেছে পুরোনু শকুন"

এই উচ্চারণ বাঙালীর হৃদয় তন্ত্রী চেতনা শানিত করে।"

"বিশ্বাসের তাঁতে আজ আবার বুনতে চাই জীবনের দগ্ধ মসলিন "  
         কিংবা
               "নদীর দিকে ফেরায় পোড়া
                নোনো জলের গন্ধ আসে ভেসে
                স্বপ্ন বুনি স্মৃতির খড়ে নাড়ায়"
                নাড়ায়,ভেতরে কেউ নিবিড় কড়া নাড়ায়"
তখন অনিবর্চনীয় এক কাব্য আস্বাদিত হয় এবং শব্দ বুননের পাণ্ডিত্ব প্রকাশ পায়।রুদ্রের ০৭টি টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।১/উপদ্রুত উপকূল ২/ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম ৩/মানুষের মানচিত্র ৪/ছোবল৫/ গল্প ৬/ দিয়েইছিলে সকল আকাশ৭/ মৌলিক মুখোশ।এই সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও রুদ্রের মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ একগ্লাস অন্ধকার এবং নাট্যকাব্য বিষ বিরিক্ষির বীজ।শুধুই কবিতায় নয় স্কুল জীবন থেকে তার সাহিত্য পত্রিকায় লেখার হাতেখড়ি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বংলা সাহিত্যে অধ্যায়ন কালে লিটল ম্যাগাজিন সহ বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেনএবং তাঁর সম্পাদিত ছোট কাগজ বাংলা সাহিত্যের নব জাগরণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।অনামিকার অন্য চোখ/ চুয়াত্তুরের প্রসব যন্ত্রণা/অশ্লীল জোৎস্নায়/উপলিকা/ স্বরূপ অন্বেষা/সাহস/ Poiema ইত্যাদি সাময়িকীগুলো রুদ্রের সম্পাদনা কিংবা সহযোগিতায় বাহির হয় এবং প্রত্যেকটি মান উত্তীর্ণ। রুদ্রের কয়েকটি গল্প ও অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে।তাঁর গল্পগুলোর মধ্যে সোনালী শিশির/ইতর/নিঃসঙ্গতা/উপন্যাসের খসড়া/ যেখানে নরকে গোলাপ পাঠক প্রিয়তা পায়। এছাড়াও রুদ্রের বেশ কিছু জনপ্রিয় গান রয়েছে"
ভাল আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো/ও নিঠুর দরিয়ার পানি/ দিন গেল দিন গেলরে/ ছিড়িতে না পারি/আমার ভিতরে বাহিরে/দরজোটাকে খোল/ ঘোরে ঘোরে ঘেরাও/ আমার পাড়ি দেব/ বৃষ্টিবরন/ হারানো সুর ফিরে এলো ইত্যাদি।"ভালো আছি,ভালো থেকো" দু-বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।তিনি নিজ গ্রাম যশোরের মিঠেখালিতে অন্তর বাজাও নামক একটি নাটক/গানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।যা এখনো ভালোভাবে টিকে আছে।আজকের কবিতা পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রুদ্রের হাত  ধরেই যাত্রা শুরু করে।
উল্লেখ্য যে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন প্রেম করে বিয়ে করেন বাংলা সাহিত্যের আরেক জনপ্রিয় ও সমালোচিত লেখক তসলিমা নাসরিনকে। কিন্তু উচ্চাকাংখী তসলিমার সাথে সে বিয়ে মাত্র তিন বৎসরে যবনিকা ঘটে।রুদ্র স্বভাবজাত এবং খামখেয়ালী জীবন যাত্রাকে তসলিমা মেনে নিতে পারেননি এমনি অভিযোগ তসলিমার।তবে বিয়ে ভেঙ্গে গেলেও রুদ্রের সাথে তাঁর প্রায়শ; ঘনিষ্ঠতা লক্ষ্যে করা যায়।কিন্তু রুদ্র হয়ে পড়ে অনেকটা নেশাগ্রস্ত যা শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুই তরান্বিত করে। তরুণ এই কবি এতটায় জনপ্রিয় যে তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই অধ্যাবদি তাঁর জন্মদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজ গ্রামে রুদ্র মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

"অন্য চোখ আছে বোলেই অনামিকা তোর বুকের উত্তপ্ত সোঁদা ঘ্রানে চিরকাল বুনবো প্রেমের বীজ আমি তুখোর তুমুল জারজ।"
                  রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ