হে বাঙালির ভাষা, তোমার অমৃত কাহিনী,
শতাব্দীর সংগ্রামে জ্বালাও আলোর প্রদীপ।
১৯৪৮-এর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে শাসকের সন্ত্রাস,
তোমার কণ্ঠে পরিয়ে দিল এক উর্দু শৃঙ্খল।
উর্দু হবে একমাত্র ভাষা— এই প্রহসনে,
বাঙালির হৃদয়ে জন্ম নিল প্রতিরোধের অগ্নি সেতু।
অত্যাচারী শাসনের হিংস্র শাসনে,
বঙ্গের মাটি জ্বলে উঠল রণক্ষেত্রর মশালে মশালে।
অতঃপর ১৯৫২— রক্তমাখা বসন্ত,
ফাল্গুনের শীতল বাতাসে
বজ্র কণ্ঠে তরুণেরা উচ্চারণ করল শ্লোগান,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,
"মাতৃভাষা কেড়ে নেবে?
তবু থাকবে না তোমার প্রাসাদ।"
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার- শফিউর
তোমরা হয়ে গেলে ইতিহাসের বীর।
পতাকা হয়ে গেল রক্তের স্রোত,
তোমাদের আত্মদান হলো অমর, অবিনশ্বর।
হে একুশ! তুমি কি জানো?
তোমার রক্তিম প্রভাত সৃষ্টি করেছিল অগ্নি-ইতিহাস।
যে ইতিহাস বঞ্চিত জনতার শিরদাঁড়া হয়ে
তর্জনী উঁচিয়ে বলেছিল— "ভাষা আমাদের অধিকার।"
রক্তাক্ত মোড়ে জ্বলে উঠেছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা,
নির্মম বুটের আঘাতে
মাতৃভূমির বুকে রচিত হয়েছিল এক মহাকাব্য।
১৯৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারি—
বিশ্ব দেখেছিল,
কেমন করে শব্দের মর্যাদায় প্রাণ দেওয়া যায়।
রক্তে রঞ্জিত প্রভাতফেরি,
ধূলি মাখা পথে বয়ে যায় শ্রদ্ধা র স্রোত।
শহীদের আত্মা জাগিয়ে তোলে
স্বাধীনতার দীপ জ্বালি উজ্জ্বল অমল।
ফাল্গুনের হিমশীতল হাওয়ায়
তপ্ত রক্তের গন্ধ ভাসে।
জীবনের সুরে মাতৃ ভাষার গান,
অক্ষরে অক্ষরে লেখা সংগ্রামের সম্মান।
তোমাদের আত্মদান— চির স্মরণীয়,
ভাষার পতাকা অটল, অবিচল।
১৮ ফাল্গুনের শপথে বাঁধা
জাতির আত্মা চির জাগ্রত।
রক্তের অক্ষরে লেখা একুশ,
অশ্রু ধোয়া শহীদের পথ।
শীতল বাতাসেও জ্বলেছিল শপথ,
ভাষার জন্য জীবন দানের প্রফুল্লতা।
১৯৫২-এর সেই অনামিশা প্রভাত,
জন্ম দিয়েছিল জাতির নতজানু অভিজাত।
গর্ভে ধরেছিল মাটির বুকে,
মাতৃ ভাষার মুক্তির পক্ষে দৃপ্ত শপথতে।
পাক হানাদারদের বুটের আওয়াজ,
নিপীড়নের স্রোতে চেপে ধরেছিল বাংলার ভূষণ।
উর্দুর শৃঙ্খলে বাঁধা এ দুঃখ,
তবু জেগে ওঠে স্বাধীনতার সুখ।
পতাকা উড়ল শহীদ মিনারে,
গান বাজল বীরদের স্মরণে।
মাতৃ ভাষায় আজ পৃথিবীর দরবারে,
বাঙালির গর্ব মাথা উঁচু করে দাড়াবে।
শহীদ মিনারের প্রতিটি ধাপ
বুকে নিয়ে দাঁড়ায় ভাষার ললাট
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২—
প্রতিটি ক্ষণেই জমেছে প্রতিবাদের অগ্নিশিখা।
শুধু ভাষার জন্য নয়,
এ ছিল জাতির আত্মপরিচয়ের ডাক।
তোমাদের রক্ত মিশে গেল মাটির গভীরে,
তাই আজ বাঙালির ভাষা অটল ও দৃঢ়।
তোমাদের ত্যাগ অক্ষয়, অমর, অবিনশ্বর।
মহাকালের বুকে চির জ্বলন্ত থাকবে রক্তে লেখা অক্ষর।
ভাষার জন্য উৎসর্গ যত প্রাণ।
দেশের জন্য উৎসর্গ যত প্রাণ।
জানই তোমাদের শ্রদ্ধা ও সালাম।