চা দোকানের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই।
কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালি সকালগুলো সেই, আজ আর নেই।
শহীদ আছে চাকরিতে, মুহিবুল বাসাতে
যায় না আজ তারা বাগানে।
সিলেটের পরিমল, নোয়াখালীর কান্তিলাল
ছাই হয়ে মিশে আছে শ্মশানে।
খালেদ, রাজ্জাক, তাঁরা, নিবিড়, চঞ্চল,
বিমল, কামাল ঘরে অসহায় ।
সজীবটা ছিল কাছে, বদলী হয়ে গেছে
সিলেট থেকে সুদূর চাটগাঁয়।
দুই ছেলে আর বউকে নিয়ে পাড়ায়
বেশতো সুখে আছে রমাদা’য়।
বিপ্লব, সুব্রত, ফারুক, সমীরণ আর
খোকন, বাদল আজও খাঁটি।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে
এখনও সকাল বেলায় হাঁটি।
পাড়ার গলিতে হাঁটে দেবাশীষ বাবুরা
কখনো নানক, সমরজিৎ।
যেতে বা ফিরতে রাস্তার কোনখানে
দেখা হয়ে যায় কদাচিৎ।
দুইটা টেবিলে বসে এক-দেড় ঘন্টা
ক্যাপস্টেন সিগারেট ঠোঁটে জ্বলত।
কখনও ধর্ম, কখনও বা রাজনীতি
এই নিয়ে ঝগড়া-তর্ক চলত।
রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে যেখানেই যে থাকুক
মর্নিংওয়াকে সবাই এসে জুটতাম।
পৌনে আটটা’য় শুরু হয়ে, জমিয়ে আড্ডা মেরে
পৌনে ন’টায় সবাই উঠতাম।
সেই বাইশজন নেই আজ, দোকানটা আছে শুধু
করোনার ভয়ে তালাবন্ধ।
চায়ের পেয়ালাগুলো আজও খালি নেই
হউক তা সে ভালো বা কি মন্দ।
রাস্তাটা ফাঁকা থাকে, চারিদিকে শুনশান
দোকানটা নিশ্চল দাঁড়িয়ে রয়।
সুমন অপেক্ষা করে, দোকানটা আধা খুলে
চায়ের পানি ফুটে শেষ হয়।
[আমরা বিভিন্ন পেশার বাইশজন বন্ধু-বান্ধব সিলেট শাহপরান এলাকার বাসিন্দা। প্রতিদিন সকাল বেলায় আমরা নিয়মিত চা বাগানের ভেতরে হাঁটতে যাই। সুমনের দোকানে বসে আড্ডা দেই দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদার সেই বিখ্যাত গান ‘কফি হাউজের আড্ডাটা’ মান্না দে গেয়েছিলেন। তারই আদলে আমাদের বন্ধুদের ফরমাইশে লিখে ফেললাম আমাদের মনের কথা।]