তুমি এলে,বহুকাঙ্খিত সেই তুমি
কতটা পথ পেরিয়েছ-
কতো মৃত্যু!
এইখানে তুমি দাঁড়িয়ে আছ,আর-
পায়ের নিচে বহতা একটি নদী!
তোমার জঙ্ঘাস্থি বেয়ে নামে
লোহিত ক্ষর প্লাবন;
আজো বুনো চিৎকার শুনি স্রোতের কণ্ঠে।
তুমি এলে,বহুকাঙ্খিত সেই তুমি
তোমাকে পাবার জন্য
সহস্র মিছিল এনেছিল বারুদের আঘ্রাণ-
জ্বলেছিল হাটবাজার,বাবুইপাখির বাসা!
বাস্তুসাপের কামড় খেয়েছিল আমাদের মায়েরা,
আমাদের বোনেরা আহুত হয়েছিল-
দানবের জ্বালা যজ্ঞানলে।
তুখড় ছাত্রটি সহাস্যে মরেছিল তোমাকে পেতে
তরুণ কবি কিশোর
বিচক্ষণ বুদ্ধিজীবী,আর-
কর্মঠ চাষার চোখেমুখে তোমাকে পাবার কি তৃষ্ণা!
তৃষ্ণা নিয়ে গোয়ালে পুড়েছিল-
বাছুর সমেত ধবল গাইটি!
পিতার ঝাপসা চশমার শূন্য দৃষ্টিতে
তুমি দেখা দিলে-
আচমকা দেখা দিলে,ধ্রব নক্ষত্রের মতো!
মনির মাস্টারের কণ্ঠে উচ্চারিত-
মিত্রাক্ষরের কবিতার মতো দীপ্ত হলে!
রমেন দপ্তরির হাতে বেজে ওঠা ছুটির ঘন্টায়-
হুলস্হূল ইস্কুলের ফটকে উচ্ছ্বাসিত তুমি!
তুমি এলে,বহুকাঙ্খিত সেই তুমি
কবি ও কেরাণী ভুলে যেতে লাগল তোমাকে।
চতুর বুদ্ধিজীবী আর নষ্ট নেতারা দখল নিলো
তোমার দখল নিলো,আর-
ভ্রষ্টাচারী সংবিধান জুড়ে রইলে তুমি!
গণভবনের আলিশান দেয়ালে ও কামরায়
হাইকোর্টের সুউচ্চ মিনারে তোমাকে দেখলাম-
সংসদে বাইজি নাচের আসরে তোমাকে নগ্ন করা হলো;
যাদুঘরে আর স্মৃতির স্তম্ভে পরিত্যক্ত তুমি-
কনডমের খোসার মতন!
কর্পোরেট বেশ্যাদের শরীর প্রদর্শনীর মতন-
তোমার দর্শন মিলতে থাকল টিকেট কেটে!
শাহবাগে,পল্টনে,টিএসসিতে
তোমার নামে চলতে থাকল রমরমা ব্যবসা।
পোড়া মাঠে ফসলের সম্ভবনা জাগাতে
কালো কৃষকেরা রক্ত দিল
কলে কারখানায় মিশে গেল শ্রমিকের অস্তি মজ্জা
ফুটপাতে নামল বুভুক্ষা মানুষের ঢল!
তুখড় ছাত্রটি চতুর বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠল ক্রমশ'ই
নেতা হয়ে উঠল,আর-
তুমি দাঁড়িয়ে রইলে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে
অবনত মস্তকে
তোমার পায়ের তলে বহতা একটি নদী,
নদীর নাম রক্তজঙ্ঘা;
আজো বুনো চিৎকার শুনি স্রোতের কণ্ঠে।