দূর্বাঘাসের বুকের উপর কুসুম-সুরুজ আলতা মাখে
আলতাবানু এখান দিয়েই-
ছুটতো ভোরে কলসি কাঁখে।
চৌধুরীদের বাগানবাড়ি ফুলপাখিদের মেলা
সখাসখি হাতছানি দেয়,জমবে আজি খেলা
জলকে চলে সদলবলে-
পুকুরঘাটে চড়ুইভাতি রোদ
পুতুল বিয়ের উঠানে কে হানলো অবরোধ?
ছোট্ট শরীরজুড়ে- ভরদুপুরে -কানামাছি হাতরে বেড়ায়
চোখবাঁধা এই ধাঁধার বয়স-
ডাকতো সবাই ইশারায়!
চৌধুরীদের গোলাঘরে ডানাভাঙা সে পাখি
দারুণ ব্যথার ছটফটানি রক্তে মাখা-মাখি
ঘরপোষা সে মেয়ে
দেখল শুধু চেয়ে
ছেঁড়া পিরান-ছেঁড়া ফ্রকে -রক্তমাংসের দলা
চৌধুরীদের সামনে ভয়ে -হয়নি কিছুই বলা।
বাপ মায়েরা কুল খোয়ালো-
যেন আলতাবানুর দোষ
আলতাবানুর বাপ দাদারা অতীত হতেই করেছে আপোস।
আলতাবানু চৌদ্দ ডিঙ্গোয়- পনেরো কী ষোলো
অমন ভারি জাতের বোঝা কে চাপালো?
কুলের ঘায়ে ফুলের কান্না -
রাত পোহালেই বাসি
মেয়ে তোমার এই পরিচয় -শুধুই যৌনদাসী!
দুপুরবেলায় নূপুর হারায়, সন্ধ্যা বেলায় দুল
রাতের বেলায় পুকুর ঘাটে হারাল নাকফুল!
আলতাবানু চৌদ্দ ডিঙ্গোয়- পনেরো কী ষোলো
অমন ভারি জাতের বোঝা কে চাপালো?
কুলের ঘায়ে ফুলের কান্না -
রাত পোহালেই বাসি
মেয়ে তোমার এই পরিচয়-শুধুই সেবাদাসী!
কুল ডুবেছে, জাত ডুবেছে -ডুবল যখন বেলা
রাত গভীরে কালো জলে ভাসল চাঁদের ভেলা
কাঁটাঝোপে জোনাকিরা খুবলে খেলো মায়া
জলের তলে মিলিয়ে গেলো কাহার যেন কায়া
কলসি হতে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ ক'টি শ্বাস
হঠাৎ করেই "থ" হয়ে যায় উত্তরী বাতাস-
হঠাৎ করেই চাঁদের মুখে জমলো কিসের মেঘ?
তালগাছে যে লক্ষ্মীপ্যাঁচা -
তার চোখে আবেগ!
ঘর পালানো পক্ষীরা সব তুললো কলরব
আজান হলো ঠিক সময়ে-
ভোর হলে উৎসব
বাড়ি বয়ে আসলো স্বজন,আসলো গাঁয়ের লোক
সাতসকালে আকাশ হতে ঝরলো শীতের শোক।