তোমায় মনে পড়ে।
আজকের এই দিনে,
নিশিত রজনীতে জানিতে পারিলাম,
সে তো ঘরেতে নাহি।
চারদিকে নাকি হাঁকিয়া মরে,
খুঁজিয়া পায় নাই।।
খুঁজিতেছে মেয়ে, খুঁজিতেছে নাতি,
খুঁজে তাঁহার পুত্রের বউ।
পারা-পর্শি খুঁজে, আছে নাকি পাশে
লুকিয়ে কোথাও রই।।
তিন দিন পর শুনিয়া আমি,
মনটা হলো ভারি।
আত্মীয় হেনা আছে মোর জানা
খোঁজ নিলাম বাড়ি বাড়ি।
সকলি বলিল আসেনি
"দিদিমা", মোদের বাড়ি।
চারদিন পর খবর আসিলো,
পাওয়া গিয়েছে তাহাকে।
শুনে মোর মন হালকা লাগিলো,
খুশি ভারি ভারি।।
ছিল নাকি সে বাড়ির পাশেতে
খুঁজেছি সারাদেশ।
আসুক এবার বকে দিব!
বাহির হওয়া নিষেধ।।
জিজ্ঞেস হেতু
ছিল কোথা??
পরক্ষণেই সে বলিল আমায়
ভাসিয়াছে পানিতে।।
গলাটা আমার ভারি হয়ে গেল,
সময়টা হতো থমকে গেল।
চোখের কোণে জল।
ছোট্ট করে বলিলাম
ঠিক আছে, বেশ বেশ।।
বিকালে আমি বাড়িতে ফিরিলাম,
রাস্তা পাশে শব।
হোগলা যে তার, ঘোমটা তাহার,
দেখা দিতে নারাজ হয়।।
রাগান্বিত হয়ে উঠানে গিয়ে
বলিলামঃ কি হয়েছে তোমাদের?
সূর্য নামে পাটে,
তবুও কেন উঠানো হয়নি,
বউকে তাঁহার খাটে?
বলিল সবাই বাড়িতে তাঁহার,
জায়গা নাকি কম।
বাড়িতে যতো চোকরা, বুড়ো
ভয় পাবে নাকো।
জলে ডোবা যে তায়।
গাত্রে তাহার গন্ধ এখন,
পচাগলা দেহ।।
হবে না তাহার শেষ জায়গাটা
বাড়িটা নিজের নয়।
যে বাড়িতে সারাটা জীবন থাকিবে,
করিয়া আপন পণ।।
এসেছিল যাহার হাতটি ধরে,
শেষ বেলাতে তাঁহারি
পাশে ঠাইটুকু নাহি হয়।।
জিজ্ঞেস আমি
কি হবে এবার তয়?
সিদ্ধান্ত তাদের জানিয়ে দিল,
বিলের পাশে শশ্মান ঘাটে
পুড়িয়ে দিও তয়।।
নৌকায় তাই শবটি উঠিয়ে
গোটা কয়েক লোক।।
বিলে মাঝে শশ্মান দিকে
রওনা হলাম বেশ।
ক্ষনিক সময় চলার পরে,
পৌঁছে শশ্মান ঘাট।
বুঝিতে মোরা পাড়িলাম বটে
ঘাটটা যে সেটা নয়।
ভুল পথে মোরা আসিয়াছি,
ফিরিলাম এবার সঠিক পথে আশে,
শশ্মান পাবো ঘাটে।।
সারাবিলটা খুঁজিয়া মোরা,
ব্যর্থ পথিক নাবিক।
শেষ ঠিকানা করিলাম তাঁহার,
ঐ সেই জলের মাঝে।।
চোখ খান আমি বন্ধ করিয়া,
বলিয়াছিলামঃ তোমার স্থান
দেখিয়ে দিলে আগে।।