(০১)
হালচাল
-বিচিত্র কুমার

এক যে আছে মজার দেশ, চমকে ভরা রঙ,
ডিজিটাল সব কাণ্ডকারখানা, তাকাও চোখ মেলং!
ফোনে বাজে ঘুমের গান, ঘড়ির কাঁটা থামে,
লাইকের বন্যায় ডুবে আছে সবার ভালোবাসা নামে!

সেই দেশেতে মেঘের মধ্যে ইন্টারনেটের বাস,
রাতের বেলা সূর্য ওঠে, চাঁদ দেয় রোদ-আভাস!
ট্রাফিক সিগন্যাল কথা বলে, হাঁটতে বলে উল্টো,
ইঁদুর চালায় বড় গাড়ি, ঘোড়া দেয় হাঁটার পুল্টো!

লোকেরা সেথা আকাশে হাঁটে, মাটিতে দেয় জাল,
বিকেলে সবাই পড়তে বসে, গেমের মাঝে মাল।
গাড়ি চলে জলের মধ্যে, রিকশা ছুটে আকাশে,
মাছেরা গায় গান সুরে, পাখি শোনে বাতাসে!

ফেসবুক সেথা বারান্দা, সবাই দাঁড়ায় সারি,
ইনস্টাগ্রামে ছবি তোলে, যেমন খুশি ভারি।
লাইকের ঝড়ে ছুটে চলে স্ট্যাটাসের বিরাট নৌকা,
দাদু-ঠাকুর দৌড়ে আসে, ছেলেরা বলে 'হোক্কা'!

ভিডিও কলে খেলার মাঠ, প্যান্ডেলে নাচের দল,
মাঠে নামা নেই কারো, ব্যাট-বলের কাজ চোল!
বইয়ের বদলে ট্যাব সেথা, পড়ার শেষে সেলফি,
বাচ্চারা দেয় সাইবার চুমু, প্রেমের চিঠির খেলা কুলফি!

চকলেট আসে ই-মেইলে, চিপস ডাউনলোড হয়,
ড্রোনে ভেসে ফুচকা আসে, খোকারে দেয় সুখের জয়!
মজার দেশের মজার রূপ, সত্যি কি নাকি স্বপ্না?
চোখ খুললে যেন মিলিয়ে যায়, মুদলেই আসে কল্পনা!

এমন দেশের গল্প শুনে সবাই করে হাহাকার,
তবুও স্বপ্নই মধুর লাগে, বাস্তব ধোঁয়াশায় পার!

(০২)
আলুর দমের মহোৎসব
-বিচিত্র কুমার

বনে হলো একদিন বড় আয়োজন,
আলুর দম খাওয়ার আসলো নিমন্ত্রণ।
গরু, ছাগল, বাঘ আর সিংহ সবাই বলে,
"আলুর দম খেতে যাবো, মজাই হবে জলে!"

হাঁসটা বলে, "দাও না একটু ঝোল বেশি,
মুড়িমাখা ভিজিয়ে খাবো, জমবে তো বেশ খুশি।"
কাক বলে, "আমার জন্য রাখো ঝালের ঝাঁঝ,
আলুর দমের স্বাদে বারুক মশলার সাজ।"

শেয়াল মশাই বলে, "আমি তো হবো প্রথম,
মুড়ি আর দম মিলিয়ে খাবো আলুর কুসুম!"
খরগোশ বলে, "আমার দম হবে একটু মিঠে,
সবার চেয়ে আলুর টুকরো হবে যেনো ভিটে।"

হাতি এসে হুমকি দিয়ে বলে, "হাত বাড়াও,
আলুর দম প্রথম খাবো, সবাই ফাঁকা হও!"
ময়ূর বলে, "নাচবো আমি দমের জন্য বটে,
ঝোলে ভেজা আলুর সঙ্গে লুচি খেতে মজে।"

শুকর এসে চেঁচায়, "আমার ঝোল দিও মোটা,
আলুর সঙ্গে থাকবে যেনো একটু আদা টোটা।"
সাপ বলে, "ঝালে হবে মশলা গরম গরম,
ঝাঁঝালো সেই দম খেয়ে ঝরবে চুমকুড়ি চরম।"

বাঘ এসে বলে, "মাংস ছাড়া হবে কেমন দম,
দমের সঙ্গে মাংস রাখো, মিলিয়ে দেবো জম।"
ময়ূর বলে, "নাচের সঙ্গে খাওয়ায় দিলে সুখ,
মাংস ছেড়ে দম খাওয়ার হবে আসল বুদ্ধি ফুঁক।"

বনে হলো মহোৎসব, জমলো দমের মেলা,
আলুর দমে মন ভরলো, পেলো নতুন খেলা।
সবার মুখে আলুর দমের প্রশংসা হলো ভারি,
সবাই খেয়ে খুশিতে নাচে, বেজে উঠল তবলা-সারি।

আলুর দমের কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল বনে,
পশুপাখির মিলনমেলা রঙে রঙে সেজে ওঠে ক্ষণে।
যতদিন তারা বেঁচে আছে, আয়োজনে হবে মেলা,
আলুর দমে জমবে খুশি, হাসির ঢেউে গড়াবে খেলা!

(০৩)
পিপীলিকা
-বিচিত্র কুমার

পিপীলিকা পিল পিল পিল
তারা চলে সারি মিল
মাটির তলে ছোট্ট ঘর,
সারাদিনই কাজের পর।

খাবার খোঁজে সারি বাঁধে
কষ্ট করে, তবু সাধে,
মাটির নিচে লুকায় ধন
দেখে সবাই করে পণ।

পিপীলিকা পিল পিল পিল
থামে না কেউ এক তিল,
মিলেমিশে কাজের ধারা
নেই তাদের মনগড়া।

যতই ছোট, ততই জোর
মিলে মিশে করে ভর,
ছোট ছোট পায়ে চলে
কর্মের মাঝে সার্থক মেলে।

পিপীলিকা পিল পিল পিল
তাদের জীবনে কত মিল,
কাজের মাঝে খোঁজে মজা
মিলেমিশে হাসির সাজা।

(০৪)
টুনটুনি আর ময়না
-বিচিত্র কুমার

টুনটুনি আর ময়না মিলে,
খেলা করে ধান ক্ষেতের তলে।
টুনটুনি বলে, "উড়তে পারিস?"
ময়না বলে, "আমি তো রাজিস!"

টুনটুনি উড়ে দিক দিগন্তে
ময়না থাকে নিজের প্রান্তে
ময়না বলে, "দেখিস ছোটা,
পিঠে লাগাবো আমের বোঁটা।"

টুনটুনি হেসে বলে, "আহা!
তুই যে ময়না, মহা বাহা।
কাজের চেয়ে বড়ো তোর ঢং,
আমার ডানায় রামধনু রং!"

ময়না তখন করল রাগ,
"তোর চেয়ে বেশি আমার ভাগ।
উঁচু ডালে বসে থাকি,
তুই তো নিচে পাতার পাখি!"

দু'জনে মিলে আবার হেসে,
ফেরত যায় নাচতে এসে।
ফুলে ফুলে লুকোচুরি,
খাওয়া শেষে কীর্তি গড়ি!

এই তো তাদের সারাদিন,
টুনটুনি আর ময়নার বীন।
হাসির ঝলক, খেলার গান,
দুই পাখির মজার প্রাণ!

(০৫)
বাঘের ছেলের জন্মদিন
-বিচিত্র কুমার

বনের মধ্যে ঢোল বাজে, আজকে কী যে দিন,
বাঘের ছেলের জন্মদিনে বাজবে খুশির বিন।
হাতি মামা দোল কিনে দেয়, রাজার মতো চেয়ার,
গান গেয়ে সব বানর এসে বাজায় মিঠা সুরের গিটার।

ময়ূর এসে লেজ ঝাঁকিয়ে বলে, "নাচবো আজকে ঠিক!"
বাঘের ছেলের সাথে মিলে বাজাবো এক ঝিকমিক।
হরিণ ভাইয়ে জুটেছে সব, এনেছে ফুলের মালা,
পাখিরা সব গাইছে গান, ঝরছে সুরের পালা।

সিংহ মামা এসেই বলে, " কেকটা কত্ত বড় রে!
জ্যোৎস্না রাতের সাদা কেক, মধুর সাথে পাত্র দাও ভরে।”
খরগোশ এলো কানের দুলে, ছোট ছোট পায়ে,
বাঘের ছেলের কানে কানে বলল কিছু কাছে পেয়ে।

ফিঙে পাখি বলছে হাসি, "পেলাম কই রে মিষ্টি?"
তরতাজা ফল নিয়ে আসে বাঁদর রাজা মুষ্টি।
উট মামা এলো দৌড়ে, চেঁচায় তালে তালে,
"আবার যদি দাও আমায় লাড্ডু, নাচবো পেখম তুলে।"

কোকিল এসে গান ধরেছে, 'হ্যাপি বার্থডে টু ইউ',
বাঘের ছেলে খিলখিলিয়ে হাসে, “বাহ! দারুণ হচ্ছে মিউ।”
মাছরাঙা এলো উড়তে উড়তে, ডানা ঝাপটিয়ে নাচে,
"জলপানা চাই বন্ধু বাঘের ছেলের,শুভ জন্মদিনের আড্ডাতে।"

শেয়াল মশাই কবি বড়, লিখেছে চিঠি খোলা,
"বাঘের ছেলে বাঁচুক দীর্ঘ, এ জঙ্গল হোক সবুজ-ঢোলা।"
জিরাফ এসেছে জুতো পরে, বলে, "পায়ে পায়ে হাঁটি,
বাঘের ছেলের জন্য আজ নাচি, বাজি ঢোলের সুরে খাঁটি।”

খুশির মেলা, গান আর ছড়া, ভরেছে বনের কোণ,
বাঘের ছেলের জন্মদিন আজ, সবাই গায় আনন্দে গুনগুন।
সবাই মিলে হাসিমুখে বলছে, "বাঘের ছেলে,
তুই যেন থাকিস এমনই প্রিয়, ভালোবাসা তুই পেলি সবার সাথে মিলে।"

সারা মাঠে জঙ্গলে আজ ছড়ালো সুখের চিৎকার,
বাঘের ছেলের জন্মদিন, এটা তো এক অনন্য রোজকার।

(০৬)
পেঁচু আর চড়াই
-বিচিত্র কুমার

পেঁচা বলে, "আমার নাম পেঁচু,
রাতের রাজা, দেখ না যে পিছু।
চড়ুই তুমি করো বেলা,
রাত হলে ঘুমাও মেলা?"

চড়ুই হেসে বলে, "পেঁচু ভাই,
দিনে আমি চড়াই রাজার ঠাঁই।
সূর্যের আলোয় নাচি, গাই,
তুমি কোথায় লুকাও ভাই?"

পেঁচা হেসে বলল, "ওরে চড়ুই,
রাতেই আমার জগৎটা রুই।
নিশিরাতে ছুটে যাই,
তোমার ঘুমেতে শান্তি পাই।"

চড়ুই বলে, "শুনে রাখো পেঁচু,
দিনে আমার রাজপাট ঘেঁচু।
তুমি যখন নিশির রাজা,
আমিই দিনের রাজা সাজা!"

(০৭)
ইলিশের গন্ধে মাতামাতি
-বিচিত্র কুমার

ইলিশ মাছের গন্ধে ভাসে, বনের পশু-পাখি,
শেয়াল বলে, "কোথায় পাই, খেতে যে মন আকুলি!"
কাক বলে, "এই মাছ খাবো, ঘাড়ে বসে রাঁধবো,
ইলিশের তেলে ভিজিয়ে পেটটা বেশ মাখবো।"

বকটা আসে নদীর ধারে, লম্বা ঠোঁটের সাথে,
বলছে, "ইলিশ মাছ খাবো, ঘাড় বাঁকিয়ে পাতেথে।"
মাছরাঙা চুপটি করে নদীর তীরে বসে,
বলে, "ইলিশ চাই খেতে, নইলে ত্রাহি ত্রাহি শেষে।"

ভালুক আসে গর্জন দিয়ে, বলে, "মাছটা দাও,
ইলিশ ছাড়া ভাত খাবো না, মুখ ভার যেন পাও।"
হাতি আসে ঢুঁশ ঢুঁশ করে, বড় বড় দাঁতে,
বলছে, "আমার শুঁড়েতে দাও ইলিশ, এক মুঠে খেতে।"

বাঁদরগুলো লাফিয়ে এসে, গাছের ডালে চড়ে,
"ইলিশ মাছ চাই আমরাও," ডাকে সবাই জোরে।
হরিণ বলে, "আমারও তো মাছের স্বাদ চাই,
ইলিশের ঝোল হলে তবে মন ভরবে ভাই!"

গরু এসে বলে, "মাছটা খেতে চাই যে আমিও,
ইলিশের মজা পেলে দুধ দিবো গুঁড়োগুড়িও।"
ছাগলটা বলে, "দাও মাছ, আমারও তো সাধ,
ইলিশ না পেলে আমি যে করবো মহাবাদ!"

পায়রারা সব জুটে এসে, ডাকে সুরেলা গান,
বলছে, "ইলিশ খাবো আজ, হলো একার মান।"
মুরগিগুলো ঠুকরে বলে, "কী আর দিবে ঠাঁই,
ইলিশের তেলে রাঁধলে তবে মুখটা হাসি পাই।"

শেষে সবাই মিলে বলে, "ইলিশ একটাই রানী,
যে পাবে সে আজ হবে খুশির এক প্রাণী!"
বনের সবাই একত্র হলো ইলিশ খাওয়ার তরে,
ইলিশের গন্ধে মাতলো বন, মজার স্বাদ ঘিরে!

(০৮)
খুকু ও টিয়াপাখি
-বিচিত্র কুমার


টিয়াপাখি! টিয়াপাখি! পিপঁড়েটা খাও?  
কাঠবিড়ালির খাওয়া জেনে নাও।  
গুড়-মুড়ি, দুধ-ভাত কি খাও?  
অথবা চিড়েবুটে, জ্যান্ত তেলাও?  

টিয়াপাখি! তুমি কি মিষ্টি, সখি?  
সোনালি পালক, চঞ্চল দেখি।  
নবীন পাতায় পিপঁড়েদের গান,  
বাতাবি-নেবু দিয়ে তুমি কেন সঞ্জয়াণ?

অথবা বেড়ালের ঘরে সাড়সাড়া  
ফুলের সুবাস, পাতা দাও না সারা।  
জানালার তলায়, টোকা দিয়ে ডাকো,  
একটু মিষ্টি দিলেও, আমার গা তো ছোকো।

খুকু আছো কি সাথেই? নকশার সাথে?  
জানো কি? পিপঁড়েটা খাও তুমি কি হাসে?  
চোখের জলে, মিষ্টি নিয়ে চেঁচাও,  
টিয়াপাখি, দাও পিপঁড়েটা! তুমি কেমন লাগাও?

(০৯)
ভূতের রেলগাড়ি
-বিচিত্র কুমার

রাতের আঁধারে ভূতের গাড়ি চলে,  
ডালা ভরা হাড়ি, হাওয়ায় ঝুলে,  
ঘণ্টার শব্দে কাঁপে কুঁড়েমি রাত,  
ভূতের রেলগাড়ি ছুটে যায় তাত।  

বগিতে পেঁচানো ভূতের দল,  
চাঁদের আলোয় মিশে ভুতুরে ঝল,  
ছুটছে গাড়ি, কাঁপছে মাটির কোর,  
হাড়ির গান শুনে ভয়ে পোর।  

রেলপথের দুলুনি, ভূতের গগন,  
ছাড়াছাড়ি হাড়ির ভেসে উঠে রগন,  
দরজার ফাঁকে কান্নার সুর,  
ভূতের গাড়ি চলে নিঃশব্দে দূর।  

শেষে গাড়ি থামে গোপন বাঁকে,  
ভূতেরা সরে যায় একটুখানি ডাকে,  
অন্ধকার রাতে স্বপ্নে ভরা ছড়া,  
ভূতের রেলগাড়ি, রয়ে যায় স্মৃতি সারা।

(১০)


শীতের আনন্দের দোলনা
বিচিত্র কুমার

শীত এসে হুড়মুড়িয়ে, হাওয়ার ঠাণ্ডা ঢেলে,
গাছের পাতা কাঁপছে, কাপছে গরুর দলে।
খরগোশ গর্তে লুকিয়ে, গরম রাখে সঙ্গ,
পাখিরা সেজেছে মফুর, গায় দিচ্ছে রঙ্গ।

মোরগ বলল, “হ্যালো!” ঠাণ্ডায় কাঁপুনি,
কাঠের চুলায় উঁকি দিয়ে দেখে আগুনের মিনি।
শীতের খাওয়ার তেল, মিষ্টি রুটির গন্ধ,
মাছেরা জিভে জল দিয়ে ভাবছে মন্দ।

বাঁদর বলছে, “আহা! ঠাণ্ডায় মজা ভরপুর,
গাছের ডালে ঝুলে থাকি, শরীর ঠাণ্ডা মিটে পুর।”
গরু-মহিষ গায়ের চাদর, গা গরম রাখে,
গরম ভাতের স্বপ্নে, মিষ্টি কথা ভাগে।

সাপেরা গর্তে ঢেকে, ঘুমিয়ে সারাদিন,
প্রথমে ঠাণ্ডা পরে, স্বপ্নে ভাসে সোনার বিন।
পিপঁড়ে মিষ্টি খাওয়া, শীতের ঝাল খোঁজে,
তবে গরম স্যুপে, আনন্দের গান গোজে।

বাচ্চাদের তুষার যুদ্ধ, মজার কাণ্ড,
গোলাপী লেপে ঢেকে, শীতের আসর জমে ফাঁন্দ।
ফুটবল খেলায় বরফে, হিল্লোলের নাচে,
শীতের মজার দিন, বন্ধুরা সবার কাছে।

এমন শীতের সময়ে, সবার আনন্দ খোশ,
বরফের মাঝে হাসি, সব ভুলে গেলে সোজ।
পশুপাখির সঙ্গ নিয়ে, হাসির নতুন কাহিনী,
শীতের রংধনুতে, মজা হয়ে যাই সব মিনি।



https://www.facebook.com/profile.php?id=100014642137028&mibextid=ZbWKwL