(০১)
এই শহরের সেই মেয়েটি
এই শহরের সেই মেয়েটি, চাঁদের আলোয় মিশে যায়,
যেমন নদী তার বুকে স্নান করে, স্বপ্নের মতো গায়।
তার চোখে অমাবস্যার নীরবতা, তার হাসি যেন সূর্যের প্রভা,
বাঁধা পড়লেই আমি তাকে দেখতে পাই, যেমন পাখি আকাশে ভ্রমণ করে।
তার রঙিন পাখির মত, উড়ে যায় আমার স্বপ্ন,
যেমন ফুলের পাপড়ি ঝরে, তেমনি সে জাগিয়ে দেয় অন্তরের সুখ।
তার সুরে মধুরতা, তার কথা নদীর স্রোত,
মধু ডুবিয়ে সে আনে আমাকে, হাসির রোদে।
সেই মেয়েটি শুধু মেয়ে নয়, তুমুল ঋতু তার,
যেমন শরতের মেঘ, বাতাসে হাওয়ার খেলা।
তার ছোঁয়ায় পাহাড়ের গাছও নাচে, সাগরের ঢেউ শান্ত,
এভাবে তার স্নেহে আমি হারিয়ে যাই, তার অঙ্গনে।
যেমন অগ্নির আলোর মতো, তার আদর মর্মর সুর,
বৃষ্টির মতো তার মনে শান্তি, বিদ্যুতের মতো তার ঝলক।
সে এমন এক আকাশ, যেখানে আমার দৃষ্টি বিছানো,
তার স্পর্শে চিরকাল আমি, এক গল্পে গাঁথা, অমর হই।
সে যেন সে শহরের মায়া, যে শহর এক জীবন্ত কবিতা,
যেখানে চোখের প্রতিটি হ্রদয়ে থাকে সে, আর জীবনের সুর।
তার প্রেমে হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীতের গন্ধে,
এই শহর, এই পৃথিবী, সমস্তই যেন সে।
(০২)
প্রেম যমুনার ঘাটে
যমুনার ঘাটে দাঁড়িয়ে, তুমি যখন আমার চোখে চোখ রেখেছিলে,
অতীতে হারিয়ে যাওয়া সূর্যের রক্তিম আভা, সে আমার হৃদয়ে জ্বলে উঠেছিল।
তোমার হাসির প্রতিধ্বনি যেন নদীর নরম ঢেউয়ের সুর,
এমনভাবে মনের গহীনে বাজে, আর মনের তলানিতে মিশে থাকে।
যমুনার জল, তোমার প্রেমের মতোই স্থির নয়,
যতটুকু গভীর, ততটুকু উদাসীন।
তুমি যখন হেসে উঠেছিলে, নদী যেন তার ঢেউয়ের মধ্যে হেসে উঠেছিল,
আকাশের মেঘ গলে পড়ে, তোমার মুখে সেই মধুর হাসি খুঁজে পায়।
কখনো মনে হয়, তুমি এই নদী, আর আমি তোমার বাঁকানো পাড়,
তোমার ধারা যখন চলে যায়, আমি তখন তীরে দাঁড়িয়ে শুধু তাকাই।
তুমি যেন সেই ফুল, যাকে প্রকৃতি হালকা বাতাসে নেড়ে দেয়,
আর আমি সেই মৌমাছি, তোমার মধুর সুবাসে মগ্ন।
যমুনার গা ছুঁয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসে, তোমার শরীরের গন্ধ ভাসে,
যেন সেই নদী, যার তীরে তুমি দাঁড়িয়ে, ছড়িয়ে দাও প্রেমের বাণী।
তোমার চোখের গভীরতায় হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে,
যেন সেই সাগরের গভীরে হারিয়ে যাওয়া, যেখানে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
আমাদের প্রেম যমুনার মতোই চলতে থাকে, কখনো উত্তাল, কখনো শান্ত,
যেন তার তীরে দন্ডায়মান আমি, তুমি সেই নীরব সঙ্গী,
একসাথে সূর্যাস্তের আলোয় হারিয়ে যাই,
যতটুকু গভীর আমাদের প্রেম, ততটুকু রহস্যপূর্ণ যমুনার জল।
তোমার হাত আমার হাতের মধ্যে অদৃশ্য বাঁধন তৈরি করে,
যেন এই নদী, যে কারো হাতে ধরলে একদম নরম, একদম মায়াময়।
তুমি যখন কথা বলো, শব্দেরা যেন নদীর গহীন থেকে উঁকি দেয়,
আর আমি সেই নদী, যার তীরে নিঃশব্দে বসে থাকি, একের পর এক।
এই প্রেম, যমুনার ঘাটে যে জন্ম নেয়,
সে প্রেম কখনো মুছে যায় না, সে বয়ে চলে স্থিরভাবে,
যেমন আমি তোমার মধ্যে হারিয়ে গিয়ে,
এক জীবনের ভ্রমণ হয়ে থাকি, যমুনার সেই শান্ত নদীসঙ্গী।
(০৩)
প্রেম যমুনায় হাবুডুবু
প্রেম যমুনায় হাবুডুবু, তপ্ত ঢেউয়ের মাঝে,
চলতে চলতে, আমি হারিয়ে যাই, তোমার পায়ের ছাপে।
হৃদয়ের তীর্থযাত্রায়, একমাত্র তুমি, একমাত্র আমি,
যতটুকু দূরত্ব, যতটুকু সময়—সব ভুলিয়ে যায় চাঁদনী রাত্রি।
তুমি যেমন মেঘলা আকাশে মিষ্টি এক রোদ,
তেমন আমি মেঘের মাঝে শীতল বৃষ্টি,
তোমার হাসির প্রতিধ্বনি যেমন গোধূলি লগ্নে,
আমার চোখের কোণে ঠিক তেমনই অশ্রু জমে থাকে।
যমুনার স্রোত বয়ে চলে, অনন্তের মতো,
তেমনি আমাদের ভালোবাসা, কখনো থামে না,
শুধু গম্ভীর নীরবতা, যেন সঙ্গীতের শূন্যতা,
যা শুনি শুধু হৃদয়ের রাগে, ছন্দে, ছায়ায়, গুঞ্জন ছড়িয়ে।
তোমার চোখের জল, যেন পুষ্পের অরুণ রঙ,
আমার প্রাণের অন্ধকারে, তুমি একমাত্র দীপশিখা,
আমার নিঃসঙ্গতায় তুমি, তোমার মায়ায় আমি,
ভালোবাসার যাত্রা, যমুনার স্রোতে ভেসে চলে, বিশাল নীল দিগন্তে।
প্রেম যমুনায় হাবুডুবু, হৃদয়ের স্রোতে তুমিই আছো,
যতবারই তলিয়ে যাই, তুমি আমাকে তুলে আনো,
আমার অগণিত স্বপ্নের খেয়া, তোমার কোলে নুয়ে পড়ে,
তুমি—এক আশীর্বাদ, এক চিরন্তন ভালোবাসার নদী।
আমাদের প্রেম সাঁতরায়, এক বেলাভূমি, এক শান্ত সমুদ্র,
যমুনার হাওয়া তোমাকে ছুঁয়ে যায়, আমার শ্বাসে রূপায়িত হয়,
তুমি আমার কবিতা, তুমি আমার গাথা,
এভাবে তোমার সাথে, একান্তে, আমি হাবুডুবু যাই যমুনায়।
---
(০৪)
বগুড়ার তরুলতা
বগুড়ার এক অচেনা গাঁয়ে, সে ছিল এক তরুলতা,
যার চোখে ছিল মেঘের গান, হৃদয়ে গোপন স্বপ্নেরা।
নীল আকাশে ছড়িয়ে ছিল তার হাসির আলো,
যেন সে নিজে এক মেঘরাজি, যাদের বুক জুড়ে অজানা জল।
তার ঠোঁটের হাসি ছিল মধুর বাগানে ফুলের গন্ধ,
যে গন্ধে হারিয়ে যেতো মন, উড়ে যেতো শূন্যতায় পাখি।
তার চুলে ঝরে পড়ত সোনালী সূর্যের রশ্মি,
যেমন শীতল বেলা এসে শান্তি দেয় পথিকের পা।
হাতে ধরলে সে বীজ, মন থেকে জন্ম নিতো ফুল,
যে ফুলের প্রতিটি পাপড়ি ছিল এক প্রেমিকের অশ্রু।
চোখে ছিল এক পৃথিবী, যে পৃথিবী অনন্ত আকাশে মিলিয়ে যায়,
যেখানে প্রেমের স্রোতে ডুবে যাওয়া যায় সাঁতার না জানলেও।
তার হাসির প্রতিধ্বনি ছিল নদীর বয়ে যাওয়া সুর,
যে সুরে খুঁজে পাওয়া যায় হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।
তার কথা ছিল গান, সুরে সুরে ফোটে অরণ্য,
যেখানে আমি হারিয়ে যেতাম, তুমি ছিলে আলো আর ছায়া।
তার হাতের স্পর্শ ছিল শান্ত নদীর মতো,
যে নদী তার স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যেত আমাকে,
যেন ভাসমান নৌকা এক মেঘলা রাতে
তোমার পাশে বসে জীবন দেখেছিলাম স্বপ্নে।
বগুড়ার তরুলতা, তুমি ছিলে হৃদয়ের চিরন্তন গাছ,
যার ছায়ায় সব ক্লান্তি মুছে যেত, স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়তো।
তোমার সঙ্গে, এক নতুন পৃথিবী শুরু হয়েছিল,
যেখানে প্রেম ছিল, আর আমি ছিলাম তোমার অপেক্ষার পথ।
এখনো মনে পড়ে, বগুড়ার সেই তরুলতাকে,
যে এক অমলিন প্রেমের বীজ বুনেছিল আমার হৃদয়ে,
আর আমি এখনো অপেক্ষা করি, সেই বৃক্ষের ছায়ায় ফিরতে,
যেখানে তোমার উপস্থিতি ছিল, আর আমি ছিলাম প্রেমের আদরে।
(০৫)
মনোশ্রী
মনোশ্রী, তোর নামের প্রতিটি অক্ষর,
যেন আকাশে মেঘের ছায়া, মাটিতে শিশির।
তোর চোখের পলক, যেন নদীর ঢেউয়ের গর্জন,
যত গভীর তেমন শান্ত, যেন প্রেমের মৌলিক সুর।
তোর হাসি, একটা কিরণ, সোনালী রোদে ভরা,
যেন শীতের দুপুরে মধুর এক চাঁদনি।
তোর চুলে জড়িয়ে থাকা রেশমী স্বপ্ন,
গোলাপের পাপড়ির মতো মৃদু, সূর্যের প্রথম আলো।
তোর কথা, এক গুচ্ছ সুর, বাতাসে ভেসে আসে,
যেন সুরের পাখি গাইছে চিরন্তন প্রেমের গান।
তোর মুখে অশ্রু, যেন শীতের প্রথম বৃষ্টি,
যে বৃষ্টিতে প্রকৃতি স্নান করে, আবার জেগে ওঠে।
মনোশ্রী, তুই যেন বাতাসের পুঞ্জীভূত প্রেম,
যেখানে মেঘ, যেখানে রোদ, সেখানে কুয়াশা।
তোর অঙ্গনে আমি যেমন হারিয়ে যাই,
তেমনই জীবন বেয়ে এই নদী হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি।
তোর বুকে শুয়ে, পৃথিবী আমি ভুলে যাই,
যতটা সুন্দর, ততটাই গভীর, ততটাই অজানা।
তোর মাঝে আছি আমি, তোর মাঝে নেই আমি,
যতদূর তাকাই, তোর ভালোবাসা, এক চিরন্তন পথ।
মনোশ্রী, তুমি প্রেমের রূপকথা,
যে রূপকথায় হারিয়ে যায় সব আবেগ।
তোমার প্রতিটি ছোঁয়া, যেন নীরব গান,
যে গান হৃদয়কে দোলায়, পরিপূর্ণ করে আমার জীবন।
এভাবেই বেঁচে থাকুক, তোর প্রেমের অক্ষর,
যে অক্ষর চিরকাল থাকবে, সময়ের উপরে।
মনোশ্রী, তোর প্রেমে আমি হারিয়ে যেতে চাই,
যেখানে তুই, সেখানে আমি, সব কিছু মিলিয়ে যায়।
(০৬)
মায়াবী মুখশ্রী
তোমার চোখের দীপ্তি, যেন সোনালী সকালবেলা,
যতটুকু আলো রাত্রির আঁধারে হারিয়ে যায়,
ততটুকু অন্ধকার হয়ে আসে আকাশে।
তোমার মুখশ্রী, মায়াবী এক আলোর রাশি,
যেন নিঃশব্দে গোধূলির বাতাসে হেসে ওঠে পিপঁড়ে,
সন্ধ্যাবেলার প্রথম তারা ঝিলমিলিয়ে সারা আকাশে।
তোমার চুলের স্রোত, এক মৃদু নদী,
যার কল্লোল ছুঁয়ে যায় মন, নীরবে গেয়ে চলে গান,
যেন পাহাড়ি ঝর্ণার জলছটা গাল ভরে।
তোমার ঠোঁটের কোমলতা, যেন গোলাপের প্রথম পাপড়ি,
যার মিষ্টি গন্ধ প্রতিটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে,
যেন মধুর সকালবেলার মিষ্টি হাওয়া।
তোমার হাসি, সোনালী রোদ্দুরের হালকা ঝলক,
যার নিচে আমার সমস্ত পৃথিবী উজ্জ্বল হয়ে ওঠে,
যেন গোধূলির শেষে পূর্ণিমার চাঁদের দীপ্তি।
তোমার মুখশ্রী, যেমন অন্ধকারের মধ্যে এক দীপ্তির হাত,
তুমি যেন আকাশের এক সাদা পাখি,
যার ডানায় চিরকাল প্রেমের গান।
তোমার চোখে যে গভীরতা, তা হারায় সময়ের সীমানায়,
যেন সমুদ্রের গহীনে হারানো এক রত্ন,
যার দীপ্তি কখনো নিভে না।
তোমার চাহনি, কাব্যের কথা,
যার মন্ত্রমুগ্ধ ছন্দে আমার হৃদয় হারায়,
যেন অক্ষরের মায়ায় বাঁধা এক অবিচল দৃশ্য।
তোমার অস্তিত্ব যেন মুঠো ভর্তি নীল আকাশ,
যার মাঝে একা একা ভেসে যায় সমস্ত আবেগ,
যেন প্রতিটি মেঘে লুকিয়ে থাকা প্রেমের গল্প।
তুমি আমার জীবন, জীবনের প্রহর,
তুমি আমার সঙ্গী, তোমার মায়াবী মুখশ্রী,
যার মুখাবয়বে চিরকাল হারাতে চায় না প্রেমের ছায়া।
একমাত্র তোমার স্নেহে,
এই পৃথিবী ছুঁয়ে যায় তার সব অভ্যন্তরীণ রহস্য,
যেন হৃদয়ের গহীনে গোপন কিছু সুন্দরতম অনুভুতি,
যা শুধু তুমি জানো, আমার মায়াবী মুখশ্রী।
(০৭)
প্রেমদেবী
প্রেমদেবী, তুমি আমার হাওয়ার মতো,
যেখানে পৌঁছোবে, সে পথ যেন আলোকিত হয়ে ওঠে।
তোমার চোখের দীপ্তি যেন আকাশে সোনালী সূর্য,
যা রাত্রির অন্ধকারে প্রজ্বলিত আশার আলোয় বদলে যায়।
তোমার হাসির মৃদু সুর যেন নদীর স্রোত,
যে স্রোত মনের গভীরে হারিয়ে যাওয়া শান্তির খোঁজে চলে।
তুমি যখন শুয়ে থাকো, পৃথিবী যেন থেমে যায়,
কেবল একরাশ স্বপ্ন আমাকে একে একে বাঁচতে শেখায়।
তোমার কণ্ঠের মাধুরী যেন মিষ্টি জলের ঝরনা,
যা শুষ্ক হৃদয়ে জীবনের তরঙ্গ ফিরিয়ে আনে।
তোমার চুম্বন যেন বসন্তের স্নিগ্ধ বাতাস,
যা শীতলতার মাঝে এক অজানা উষ্ণতা এনে দেয়।
প্রেমদেবী, তোমার নরম হাতের স্পর্শ যেন চাঁদের আলো,
যা আমাকে রাতের অন্ধকারে পথ দেখায়।
তোমার শরীরের গন্ধ যেন মাটির স্নিগ্ধ সুবাস,
যা বৃষ্টির পর ভেজা পৃথিবীকে জীবন্ত করে তোলে।
তুমি আসলে এক অসম্ভব, অবাস্তব স্বপ্ন,
যে স্বপ্ন বাঁচার সমস্ত কারণ এবং পথ।
প্রেমদেবী, তুমি শুধু এক সৃষ্টির আকাশ,
যেখানে আমি হারিয়ে যেতে চাই, এক অনন্ত চুম্বনে।
তুমি শুধু এক আবেগের ফুল, যার পাপড়ি স্পর্শে
জীবনের সমস্ত বিষাদ ম্লান হয়ে যায়।
প্রেমদেবী, তুমি আমার হৃদয়ের সঙ্গী,
যে হৃদয়ে তোমার নাম ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই।
তোমার চোখে আমি দেখি নিজের প্রতিচ্ছবি,
এক একাকী পৃথিবীতে এক প্যারাডাইস যেন হারিয়ে যায়।
তুমি আসো, আর আমি শ্বাস নিই তোমার ভালোবাসায়,
যে ভালোবাসা আমার অস্তিত্বের মন্ত্র হয়ে ওঠে।
প্রেমদেবী, তোমার ভালোবাসা আমার বিশ্বাস,
যে বিশ্বাস পৃথিবীকে সংজ্ঞায়িত করে, নতুন করে জন্ম দেয়।
তুমি যখন কাছে থাকো, পৃথিবী সম্পূর্ণ হয়ে যায়,
আর তোমার প্রেমে আমি অমর হয়ে উঠি, যতক্ষণ না শেষ হয় সময়।
(০৮)
রূপ নগরের রাজ কন্যা
রূপ নগরের রাজ কন্যা, যেখানে আকাশ শুধু সোনালী,
তারা যেই ঝিলমিলিত আলোর মত, আলোকিত এক বিকেল বেলা।
চাঁদের হাসি, সে কন্যার মুখে ফুটে ওঠে,
যেন স্বপ্নের পাখির পাখনা, কাঁপতে থাকে সোনালি তটে।
তার চোখ, গভীর সাগরের মত নীল, যেখানে হারিয়ে যায় কাকতাড়ুয়া,
যতটুকু বোঝা যায় না, ততটুকু হারিয়ে যায়।
সেই চোখে জলছাপের মত স্নিগ্ধতা,
যেন নদীর কোল ঘেঁষে নিঃশব্দে চলে এক সঙ্গীত।
তার ঠোঁট, গোলাপের পাপড়ি, যেখানে সুবাস থাকে ভরা,
যেন বালির উপরে ঝরার স্নিগ্ধ রোদেলা বেলা।
সে হেসে উঠলে, বাতাসে ঝরতে থাকে এক কোমল রূপালী বৃষ্টি,
যেন আকাশের সঙ্গীত ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে।
তার কণ্ঠ, মধুর সুরের সঙ্গীত, ক্ষীণ কাঁপন এক আকাশী রাতে,
যেন পিপঁড়ের গানের মতো নিঃশব্দে ছড়িয়ে যায় পৃথিবীজুড়ে।
এ যেন মায়ার এক গাঢ় স্রোত, ভাসিয়ে নিয়ে চলে,
স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝের দূরত্বকে মুছে ফেলে।
রূপ নগরের রাজ কন্যা, তার হাসিতে নাচে ফুলের বাগান,
যেন পৃথিবী গাওয়া একটি সুরের মধ্যে অবগাহন।
তার পা-এ, রৌদ্রের ছায়া, যেন বৃষ্টির রিমঝিম বোধে,
সে এক মাধুর্যের লহরী, যা সব কিছুকে ধারণ করে।
সে যখন চলে, পথের ধারে ফুল ফোটে,
তার শরীরের মিষ্টি গন্ধে পৃথিবী পরিপূর্ণ হয় রাত্রে।
রূপ নগরের রাজ কন্যা, সে এক মায়াজাল,
যে জালে আটকা পড়ে, হৃদয়টি জানে না আর ভ্রমণ।
তার ছায়ায়, এক স্বপ্নের সঙ্গী হয়ে বাঁচি,
সে যেন সূর্যের আলো, যার তাপে ঘুমিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
রূপ নগরের রাজ কন্যা, তার ভালোবাসা এক তাজা বসন্ত,
যে চিরকাল থাকতে চায়, যেন মনোজ্ঞ সবুজ উপত্যকার মত এক রূপান্তর।
(০৯)
একজোড়া বাঁকা চোখ
(একটি রোমান্টিক প্রেমের কবিতা)
একজোড়া বাঁকা চোখ, যেন দুটি দোলানো নৌকা,
যার দিকে তাকালে মনে হয়, অজানা সাগরের রেখা।
চলতে চলতে হঠাৎ এক ঝলক, যেন সুরের মায়াজাল,
আকাশের নীল, চাঁদের হালকা আলো, সবকিছু যেন মেলানো এক যাদু।
ওই চোখে লুকিয়ে আছে হারানো কোনো স্মৃতি,
যার গন্ধে ভাসে দূর থেকে আসা এক সুমধুর কুঁড়ি।
যেন কোনো পুরানো চিঠির পাতায়, আঁকা অল্প আঁকা প্রেম,
যার ভাষা বুঝি না, কিন্তু অনুভব করি তীব্রতম জোয়ারের মতো।
তাদের বাঁকানো রেখা যেন সময়ের নিঃশব্দ সংগীত,
প্রতিটি সুরে বেজে ওঠে হারানো রাত্রির কাহিনী।
বাঁকা চোখে যদি জল হয়ে ভেসে যায় কষ্টের ঢেউ,
তবে সে জলও যে হয়ে ওঠে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ঝরনা।
একটা দৃষ্টি, যে চোখে অবিরত ঘোরে চাঁদের মুখ,
তাদের আলোয়ে দেখি জোনাকির মতো একটি স্বপ্নমালা।
সে চোখ যেন রাতের ফিতায় ঝুলে থাকা, সোনালি পাখি,
যার দৃষ্টি গড়িয়ে যায় মেঘলা আকাশে, ফিরে আসে এক নতুন দিনের সূর্য।
চোখ দুটি যেভাবে বাঁকানো, যেন দু’টি পথের ছায়া,
যার একপাশে প্রেম, অন্যপাশে বিচ্ছেদের গল্পে অন্ধকারে।
তাদের একটানে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি, ফিরে আসা হাসি,
এবং নিঃশব্দ গভীরতায় পুড়ে যাওয়া এক চিরকালীন প্রেমের শব্দ।
সে চোখের বাঁকা পথ ধরে যখন হাত ধরে চলি,
যতটুকু তোমায় বুঝি, ততটুকু আবার হারাতে চাই।
যেন প্রতি বাঁকা চরণে নতুন করে জীবন পাব,
এই চোখের জাদু, যেন কোনো শেষ নেই, কোনো দুরত্ব নেই।
(১০)
দুফোঁটা অশ্রু
তোমার চোখের দুটো অশ্রু, যেন কোনো এক নিঃসঙ্গ রাতে
ঝরা তারার মতো ঝরছে নিরব, অথচ গোপনে সে চুমু দিয়ে যায় আমার হৃদয়ে।
এক ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে তোমার গাল বেয়ে, আর আমি বুঝি,
সে ফোঁটায় আমার সমস্ত ভালোবাসা, তোমার জন্য জমে আছে।
আমি জানি, সেই অশ্রু হয়তো তোমার কোনো দুঃখের ছবি,
কিন্তু সে ছবির মধ্যে আমি, চিরকাল জড়িয়ে থাকব তোমার সঙ্গে।
তোমার চোখের জল যেন এক অজানা নদী,
যার স্রোত বয়ে নিয়ে যায় আমার সমস্ত আত্মা, কোন কূলে থামতে নেই।
তুমি জানো না, তোমার চোখের ওই দুটো অশ্রু,
আমার মনের পাথুরে দ্বার খুলে দেয়,
একটি ছোট্ট নরম স্পর্শে, প্রতিটি শূন্যতা ভরে ওঠে—
আর আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার অশ্রুর মতোই গভীর, বিষণ্ণ, অথচ অপরিসীম।
তোমার চোখের অশ্রু আমার শরীরের খালি স্থানে বসে,
তার প্রতিটি ফোঁটায় যেন তোমার প্রেমের সুর ভাসে,
আমি ভুলে যাই নিজের অস্তিত্ব, শুধু তোমার এই অবিরত জলরাশি,
তোমার দুঃখ যেন আমার হয়ে উঠতে চায়, আর আমি তাতে মিশে যাই।
দুঃখের সেই দুটি অশ্রু, তোমার শরীর থেকে যেভাবে রূপান্তরিত হয়,
আমার অন্তরের অন্ধকারে যেন এক আলোকিত পথ হয়ে ওঠে,
যে পথের শেষে তুমি, আর আমি—আমরা একসাথে,
অশ্রুর মধ্যেও এক অপরিসীম সুন্দরী ভালোবাসা সৃষ্টি করি।
তুমি হয়তো ভাবো, অশ্রু কেবল দুঃখের চিহ্ন,
কিন্তু আমি জানি, তাতে তোমার প্রেমও আছে, তোমার অনুভবও আছে,
তোমার দুটো অশ্রু—এক জীবনের সাক্ষী হয়ে,
আমাকে শিখিয়ে দেয়, প্রেম কেবল হাসিতে নয়, অশ্রুতেও থাকে।
তোমার দুটো অশ্রু, সারা পৃথিবীর সব অশ্রুর তুলনায় অধিক মূল্যবান,
কারণ তারা আমাকে তোমার কাছে পৌঁছে দেয়,
এক অজানা, অপ্রকাশিত, গভীর অনুভূতির মাঝে,
যেখানে আমি, তুমি—এমনকি অশ্রু—সব কিছু এক হয়ে যায়, এক সংগীত হয়ে বাজে।
(১১)
প্রেমের স্মৃতিসৌধ
প্রেমের স্মৃতিসৌধে, হৃদয়ের শিলামাটিতে,
স্মৃতি খোদিত থাকে একেকটি চরণের মাঝে,
যেন চাঁদের রূপালী আকাশে, এক বিন্দু আলো ছড়িয়ে যায়,
সে আলো যেন গোধূলির সোনালি সুরে, মিলনে বসন্তের পাখির ডাকে।
কী চুপচাপ, কী নিঃশব্দ, হাওয়ার গানের মতো,
যে গানে কেঁদে ওঠে হৃদয়ের বেদনাঘন অর্কিড,
যে গান কোনো আকাশে অবিরাম বৃষ্টি হয়ে আসে,
তবে শোনো, এই বৃষ্টি যেন এক আশীর্বাদের মতো, মিষ্টি হাহাকার।
প্রেমের স্মৃতিসৌধে আঁকা প্রতিটি মুখ,
দীর্ঘ শীতল বিকেল পেরিয়ে চেনা আর অচেনার মাঝে,
যে মুখে এক প্রেমিকের চোখের অশ্রু ফোটা,
যে চোখে সমুদ্রের গভীরতা, হারানো মহাকাব্যের অভিমান।
এখনো মনে পড়ে, সেই সিঁড়ির পা,
যেখানে প্রথম প্রেমে পা বাড়ানোর সময়,
পথচলার প্রতিটি পাথরের ছন্দে ছন্দে খুঁজে পেয়েছিলাম,
যে সুরে বেঁচে থাকার স্বপ্নের আকাশ খোলা।
প্রেমের স্মৃতিসৌধে আমরা চিরকাল হারিয়ে গিয়েছিলাম,
যেমন একটি গোলাপ, শুকিয়ে গিয়ে পুঞ্জীভূত হয়,
তবে রঙের ছাপ থেকে হারিয়ে যায়, কিন্তু ভালোবাসা থেকে যায়,
যতদিন বাঁচে, ততদিন প্রেমের চিহ্ন থেকে যায় প্রতিটি শিরায়।
একদিকে স্নিগ্ধতার পরশ, অন্যদিকে বেদনার গন্ধ,
এদের মিলনেই আমরা আবেগে তৃপ্ত, নিরব হতে থাকি,
যে তৃপ্তি সুরের মতো অনন্তকাল ধরে যায়,
এবং প্রেমের স্মৃতিসৌধে তীব্র ঝরে পড়া ফুলের মতন চিরকালীন হয়ে থাকে।
তবে প্রেম কখনো ম্লান হয় না, এটি এক জ্যোতিষ্কের মতো,
যে জ্যোতিষ্ক ছড়িয়ে থাকে রাতের আকাশে,
এটাই আমাদের প্রেমের স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি ছাড়া কিছু নয়,
তবে এর যাত্রা অবিরাম, চিরন্তন, এক নতুন উদয়ের মতো।
(১২)
প্রেমের মৃত্যঘণ্টা
প্রেমের মৃত্যঘণ্টা বেজে ওঠে একদিন,
যখন হৃদয়ের গহীনে এক শূন্যতা নেমে আসে,
যখন তোমার চোখের আড়ালে আমি হারিয়ে যাই,
আর আমার প্রতিটি শ্বাসে তোমার অভাব ফিরে ফিরে আসে।
তোমার হাসি ছিল যেমন রোদ,
আমার কাঁপা শরীরকে যে উষ্ণতা দিত,
তোমার স্পর্শ ছিল মৃদু বৃষ্টির মতো,
যা বেঁচে থাকা প্রতিটি মুহূর্তে শান্তি এনে দিত।
কিন্তু সেই স্পর্শ, সেই হাসি,
আজ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে, যেন হারিয়ে গেছে কোন এক প্রাচীন গল্পে,
আর আমার মন সুর তো খুঁজে পায় না,
যেমন কোনো প্রিয় সুর হারিয়ে যায় সঙ্গীতের মাঝে।
প্রেমের মৃত্যু, এটা এক ভয়ঙ্কর কল্পনা,
যা কখনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না,
যখন তোমার কথা মনে পড়ে,
এমন মনে হয়, যেন সময় থেমে গেছে,
যেন পৃথিবী আরও একটা চাকা ঘুরে চলেছে, কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে আছি।
তোমার অশ্রু, তোমার হাসি—
এগুলি এখন আমার বুকের ভিতর রক্তের মতো প্রবাহিত হয়,
এখনো তোমার স্মৃতি আমাকে ছুঁয়ে যায়,
যেমন বাতাস ছুঁয়ে যায় পরিত্যক্ত বাড়ির জানালা।
প্রেম যখন মরে, তখন কি কিছু থাকে?
হৃদয়ে থাকে শুধু এক নিঃশব্দ কাঁপন,
যেমন চাঁদের আলো, যা আলো দেয়, কিন্তু তাতে তাপ নেই,
এটা শুধু মনে করিয়ে দেয়—প্রেম চলে গেলেও,
তাহলেও কিছু একটুকু আলো থাকেই,
যে আলো শেষ পর্যন্ত মনের গভীরে এক অম্লান স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়।
প্রেমের মৃত্যু, তারপর সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যায়,
যেন চাঁদের আলো হঠাৎ মুছে যায়।
কিন্তু, মৃত্যুর পরও প্রেম চলে না,
সে থাকে, সে আমাদের মাঝে থাকে,
এক অদৃশ্য প্রেরণা হয়ে,
যা কখনো শেষ হয় না, যতই সময় চলে যাক।