গন্ধ যুক্ত থই থই কাদাবৎ লাতফা নামক শুকনো ঠনঠনে
মাটি থেকে জন্ম আমাদের; প্রিয় মাতৃভূমি বার্মা মায়ের
কোলে । জন্ম থেকেই শুরু আমাদের জীবন ক্লিষ্ট আগুনে
পোড়া: নেই স্বাধীনতা, নেই মুক্ত ভাবে বাঁচার অধিকার নিজের
মাতৃভূমিতে । নিত্য অরণ্য শ্বাপদের সহিত তাঁদের বর্বরোচিত...
হিংস্র থাবা শকুনের মতো ধাওয়া করে বেড়ায়- এইতো সেদিন
২৫ শে অাগস্ট ধূসর আকাশ নেমে আসে গলিত ধাতুর মতো:
তাঁদের লেলিহান-শিখা অগ্নিকান্ড গাত্র হতে চামড়া খসে রঙ্গিন
ঘোলাটে পশমের মতো ধূ ধূ করে উড়িয়ে দেয় পাহাড়সমুহ 'কে ।
সূর্যপ্রদীপ, চন্দ্রললোক, তারকারাজি চুপ; আলো নির্বাপিত ।
পর্বতমালা উন্মূলিত, উর্ধ্বদেশে সুদূর সপ্তাকাশ বিবর্ণমোহ;
ঝটিকা মেঘপুঞ্জ বিচ্ছিন্নকারী, প্রলয়কারী বায়ুর ন্যায় ইতস্ততঃ
সমুদ্রের বুক ফাটিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বাসিত কল্লোল মহাপ্রলয়কারী
উপপ্লাবিত উদ্বেলিত পাহাড়ি ঢলের সমেত নেমে আসে তাণ্ডব
লীলা; সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী ও ভাভ্রা, ধর্ম, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, নারী
বর্ণ দশমাসের পূর্ণ গর্ভবতী উটনি, জীবন্ত প্রথিকক্ষ্য সহ শব
বিসর্জন দিতে হচ্ছে উদগ্র মারন-শিকলে; উল্কাপিণ্ড দ্বারা পরিপূর্ণ
নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত শিখা উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হচ্ছে
লাখো-লাখো রোহিঙ্গা; মুখমন্ডল কাদা ধূলি-ধূসর পীড়ায় বিদীর্ণ
বিক্ষত হয়ে দেহ হতে খসে খসে প'ড়ে মাংসপিণ্ড । ক্ষুধার তারনায়
জীর্ণ-গাত্র বক্ষপিঞ্জর ঠুংরু গাছবৎ, পরিণত হয়েছে পূর্ণ ভাগারে
আর শকুনির আহার্যে; সাতদিন তীর্থের কাকের মতো খেতে
না পেয়ে- অনাহারে গর্ভবতী বোনের বক্ষ হতে দুধ পান করে
জীবন প্রয়াস করুণ ভ্রাতার; এমন মুমূর্ষু ঘোর নক্ষত্রের রাতে
জ্যোৎস্নার আলোয় কেবল অশ্রুবারি ঝরছে: আর ভেসে
যাচ্ছে লাখো-লাখো মরদেহ নাফ নদীর কূল ঘেঁসে রক্তগঙ্গায় ।
যে মেয়েটির কাল বিয়ে হয়েছিল ধ্বংশের তাণ্ডবলীলা এসে
ধূলিসাত; হাতের লাল-খয়েরী মেহদীর রং টুইটুম্বুর বারি ধারায় ।
হায়, মা মাটি ভিটে দেশ বন্ধু-স্বজন সব হারিয়ে এখন শাহপরীর দ্বীপে
মোরা; জানিনা জীবনের শেষ কোথায়, আর কতদিন এই শরণার্থীরূপে ।