আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। ছেঁড়া, নীল হলদে রঙের চিঠি, এত পুরোনো যে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। কাগজের গায়ে কালো কালিতে লেখা কয়েকটি লাইন। চিঠির খামটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম, গন্ধ পেলাম পুরোনো দিনের।

এই চিঠি আমি লিখেছিলাম সুনয়নার জন্য, আমার ছোটবেলার বন্ধু। কিন্তু চিঠিটা কোনোদিনই পোস্ট করা হয়নি।

সুনয়না আর আমি একসঙ্গে বড় হয়েছি। আমরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম, গল্প করতাম, হাসতাম। কিন্তু একদিন, তার বাবার চাকরির সূত্রে সে চলে গেল অন্য শহরে। শুনেছি, পড়াশোনা শেষ করে তার বিয়ে হয়ে গেছে। আর আমি পড়ে আছি এই ছোট্ট গণ্ডির মধ্যেই। তবুও, সুনয়নাকে কখনো ভুলতে পারিনি। তার জন্য জমে আছে কত কথা,ভালো লাগা, মন্দ লাগা, অভিমান, রাগ, দুঃখ, আর ভালোবাসা।

একদিন অনেক সাহস করে সুনয়নাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম। চিঠিতে লিখেছিলাম


সুনয়না, তোমার কথা খুব মনে পড়ে। যখন তোমার সঙ্গে স্কুলে যেতাম, তখন মনে হতো তোমার হাত দুটি ধরে হাঁটি। তোমার সঙ্গ খুব ভালো লাগত। কিন্তু তুমি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম, আমি কেবল তোমার বন্ধু নই। তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো এসব বলার কোনো অধিকার আমার নেই, তবু মনে হলো, তোমার জানা উচিত। যদি কখনো ফিরে আসো, আমি তোমার পথ চেয়ে থাকবো।

চিঠিটা লেখা হলেও কখনো পাঠানোর সাহস হয়নি। অনেকবার ডাকবাক্সের সামনে গিয়ে ফিরে এসেছি।

আজ, অনেক বছর পর, পুরোনো কিছু খুঁজতে গিয়ে সেই চিঠিটা আবার হাতে পেলাম। পড়তে পড়তে চোখে পানি এসে গেল। সুনয়নার সঙ্গে কত বছর দেখা হয়নি। কোথায় আছে সে, কেমন আছে, কিছুই জানি না। চিঠিটা আবার ভাঁজ করে রেখে দিলাম।

এই চিঠি হয়তো আর কখনো পাঠানো হবে না। তবে এটা আমার জীবনের এক অসমাপ্ত গল্প হয়ে থেকে যাবে। বেয়ারিং চিঠির মতো, যা শুধু আমারই।