আজ বৃহস্পতিবার,
মধ্য প্রহরে একশ তিন ডিগ্রী জ্বরে নিয়েছি চিরবিদায়,
সদ্য হয়েছি বিগত, হয়েছি অতীত প্রিয় ভুবন আঙ্গিনায়।
আমার রেখে যাওয়া দেহ, তোমরা তাকে লাশ বল
ওকে পুড়িয়ে দাও আগুনে।
আগুনে খাবার বানিয়ে বছর বছর বেঁচে ছিল যে,
ক্রমেক্রমে বড় দেহটা আজ পুড়াও সে আগুনে।
আবদ্ধ কক্ষে জমানো বাতাসের মতো আমাকে যারা সহ্য করতে পারতো না,
আমার বাক্য যাদের নিশিন্দার মতো তিক্ত লাগতো,
আমার চলন যাদের দৃষ্টিতে ঘূর্ণিজলের মতো বাঁকা মনে হতো,
আমার কর্মে যাদের মর্মে আঘাত আনতো,
তাদের বলছি, এসো, এ দেহে আজ তোমাদের চন্দন মুখের থুথু দাও, লক্ষী পা দিয়ে গুতু মারো।
প্রতিশোধ নেওয়ার এটি অন্তিম সুযোগ।
এ অধিকার দিচ্ছি তোমাদের।
না না, কেউ বাঁধা দেবে না।
বাঁধা দেবার অধিকার কারো থাকে না।
বা সে অধিকার আমি দিয়ে যাইনি।
আমার জন্য কয়েকজন কয়েকদিন কাঁদবে,
কানে কান্না প্রতিধ্বনিত হবে কয়েকটা প্রহর মাত্র।
শুধু এতটুকুর বিনিময়ে অধিকার দেয়া যায় না।
সংকোচ করো না, লাশ কাটা ঘরে মৃতদের ধর্ষণ করতে পারে, আর তোমরা কিঞ্চিত প্রতিশোধ নিতে পারবে না?
পারবে, এসো, প্রতিশোধ লও।
জীবনকালে মৃত কয়েকজন কাছের মানুষকে প্রায় ঘুমেই স্বপ্নে দেখতাম,
আপন মানুষ না বলে কাছের মানুষ কেন বললাম?
যে আত্মা এ দেহের ভেতরে ছিল বছর পর বছর
আজ বৃহস্পতিবারে এক নিমেষে হল পর।
তাই অন্য দেহকে এ দেহের আপন বলি কি করে?
পৃথিবীতে আপন কিছু নেই। সবকিছুই স্বতন্ত্র।
আমাকে যদি কেউ ঘুমে স্বপ্নে দেখ বুঝে নিও
তোমার প্রতি আমার অভিমান অভিযোগ ছিল,
আর এ অভিমানে অভিযোগে বিশ্বাস না এলে
ধরে নিও আমি তোমাকে ভালোবাসতাম।
আমি নিশ্চিত হবো আমি একজন প্রেমিক ছিলাম।
আর কেউ-ই যদি স্বপ্নে না দেখ, নিঃসংকোচে বলছি,
আমি একজন সফল অভিনেতা ছিলাম।
যে রমণী যৌবলকালে প্রণয় দিয়ে আমায় নিয়ে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল, এ অনড় দেহে আজ শেষ নজর দেখা করো, দেরি করো না।
এবার ফেরাবো না।
কথা দিচ্ছি তোমার আত্মার গৃহকর্তা হবো।
মৃত্যু প্রকৃতির কঠিন নিয়ম যা আমরা সহজে মেনে নেই, মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত।
ঈশ্বর এ নিয়মকে মানাতে আমাদেরকে ভদ্র বানিয়েছে।
কেউ কি আছ, আমার চলে যাওয়ার কষ্ট আমৃত্যু বহন করে চলবে?
পারবে প্রকৃতির এ নিয়মকে মানতে না পারা অভদ্র হতে কেউ? আমার জন্য।