রক্তজাত বর্ণমালা
শোকের মিছিলে কী নিয়ে যাব,
চোখের জল,রক্তের ছোপছোপ দাগ,
সন্তান-সন্ততি হারা পিতামাতার ক্রন্দন ধ্বনি?
না,না, আমি বিদ্রোহের এ মহাসম্মেলনে
এ সবকে বাংলার মাটির নিচে দিয়েছি কবর।
বীরত্বের এই মহারণে
বীরের সঙ্গী রক্তজাত বর্ণ মালা।
ইস্পাত কঠিন মায়ের এ ভাষা তীক্ষ্ণ তোলোয়ার
সাহস সঞ্চারী হাতিয়ার।
এ দু’ ধারী তলোয়ার কাটে পাপীতাপীর শীর।
নাগিনির বিষ মাখানো এ বর্ণমালার অঙ্গ
পামর বধের শক্তিতে বলিয়ান।
প্রেম-ঘৃণা, সৃষ্টি-ধ্বংস আমার ভাষার অক্ষয় কীর্তি।
গ্রহণ ক্ষমতা এ বর্ণমালার চিরায়ত শক্তি,
এ শক্তিতে বলীয়ান হয়েই
আজ শহীদের রক্তস্নাত ভাষাদিবস
বিশ্ব সভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের
মর্যাদার আসনে আসীন।
এই দিবসের শোক-শক্তি নিপীড়িত,নির্যাতি্
সংখ্যালঘু ভাষার মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সঞ্জীবনী শক্তি ।
এ বর্ণমালার আওয়াজ বোরাকের মত
অকাতরে গগন ভেদ করে ফোঁড়ে ওঠে।
তাইতো দেখিছি প্রিয় বর্ণমালা
বারবার বিধাতার সান্নিধ্য লভেছে।
আমি যুগে যুগে মহা প্রেমিক হয়েছি
শুধু বাংলা ভাষায় প্রেম পত্র লেখে লেখে।
এই ভাষাতেই লেখা হয়েছে মানবতার মর্মবাণী,
‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’
এ শাশ্বত বাণী বিশ্ব মর্যাদা পরিগ্রহ করেছে সেই কবে।
সোনা-শব্দে গড়া অলঙ্কারে ভরেছে গীতাঞ্জলী
এ যে আবহমান বাঙালির সঞ্চিত অঞ্জলি
মহা মানবের গৃহে সমাদৃত ভাষার মঞ্জুরি।
বাঙালি জানিয়ে দিয়েছে মানব জাতিকে,
সকল দেশের সব মানুষের শির সম মর্যাদায় সৃষ্ট,
বীরত্বের মহিমায় সমুজ্জ্বোল।
‘ বল বীর
বল উন্নত মম শির!’
দিকে দিকে বাজে অগ্নি বীণায়।
ধ্বংস যজ্ঞে বিধ্বস্ত মানব বাগানের ক্রন্দন দেখেই
সেদিন বিশ্ব মানবতার গান হয়েছে লেখা,
‘মানুষ মানুষের জন্য,
জীবন জীবনের জন্য।’
যতবার শোকের মিছিল রক্ত গঙ্গায় ভাঙার গান গাইবে
আমি ততবার শোকের মিছিলে যাব,
গাইব মানব ধর্মের জয়গান,
কুড়িয়ে আনব শক্তি, আনব প্রেম।
চিরায়াত বাংলা ভাষা আমার অমোঘ শক্তি।
আমি কালক্রমে যুদ্ধের ময়দানে সাব্যসাচী,
আর রক্তজাত বর্ণমালার রক্ষকদের উত্তরসূরী।