ম্যালাদিন আগের কথা। তুমি আমারে নাকের নথ নাড়াতে নাড়তে ঠোঁট উঁচা কইরা কইছিলা অতো বোকাসোকা হওন ভালা না, হগল সময় বরফের লাহান গইলা যাওন ঠিক না। বেটা মাইনসের অতো আবেগ থাকতে নাই, অমন অন্ধের লাহান হগলরে বিশ্বাস করতে নাই, ছেলেমানুষি করতে নাই। তহন মনে করছিলাম এগুলা আমার গুন। তুমি ছাইড়া যাওনের পরই বুঝলাম এগুলা গুন না, এগুলা আমার নিজেরে নিজে ঠকাইবার রুপকাঠি।
তুমি ছাইড়া যাওনের পর ক্যালেঙ্কারি লাইগা গেছিলো। চঞ্চল একখান চুড়ুই পাখি বন্ধি হইয়া গেছিল আন্ধাইর ঘরে। পিরিতের কলঙ্কের ছাপ ভাইসা উঠছিলো চেহরা-ঘুরতের বিত্তে।
"আপনের ছাওয়ালডা ঠেঙ্গায় গ্যাছে "কইয়া নাকে কাপড় চাইপা চিহ্ন চিহ কইরা উঠছিলো এলাকার চাচি, কাকিরা। আম্মা চোখ ঝাপসা কইরা মাথার কিরা দিয়া কইলো- কথা দে বাপ ওই ছেরিরে ভুইলা যাবি, ওই ছেরির এতো ঠেহা পড়েনাই তোর লাইগ্যা আশি টাহা দামের কাজল নষ্ট কইরা কানবো।
তারপর আমি কেমন বদলাইয়া গেছি। রহিম চাচার দোকানের খাতা ভারি হইয়া গেছিলো সিগারেটের পাওনা টেহায়। চক্ষু দুইহান মইরা গেছিলো এট্টুখানি ঘুমের লাইগা। শইল্যের সব কয়ডা হাড় ফ্যালফ্যাল কইরা চাইয়া আছিলো চামড়ার ভাঁজ থেইকা। রক্তজবা দুইহান ঠোঁট কেমন পুইড়া গেছিলো একখান চুমোর অভাবে। ভ্রু কুচকাইয়া গেছিলো। মন মইরা গেছিলো। চুলের রঙ উইড়া গেছিলো। আমি কেমন বদলাইয়া গেছিলাম।
তুমি ছাইড়া যাওনের পর পথের একখান ঘাসরেও আমি আর বিশ্বাস করবার পরি নাই। চোখের সামনে কেউ ছটপট কইরা মইরা গেলেও আমার ভিতরে ধরদ উতলাইয়া উঠে নাই। হাউমাউ কইরা কাইন্ধা কেউ চোখের ভিতরে জল ঢুকাইয়া দিলেও আমারে নতজানু করবার পারে নাই।
তুমি ছইলা যাওনের পর বন্ধুমহলে আমার নামের লগে ট্যাগ লাইগা গেছিলো ছ্যাকাখোর, এলাকার মাইনসের কাছে নেশাখোর, বাপ মায়ের কাছে অবাধ্য ছাওয়াল। অতচ আমি কোন কালেই এইরাম হইবার চাই নাই। তামাম দুনিয়াডা রে আমি ক্যামনে বুঝাই আমি মজনু, ফরহাদ, শাহজাহান চন্ডিদাশ, হইবার চাই নাই। আমি একখান খাঁটি প্রেমিক হইবার চাইছিলাম, তোমার হইবার চাইছিলাম। অথচ পিরিতের কারিগর আমারে জলজ্যান্ত একখান মাটির মানুষ থেইকা কেমন পাথর বানাইয়া গেলো।
লিখক: আমার এক আপনজন