এটা কার বাংলাদেশ?
আমি আমাদের বাংলাদেশের কথা বলছি—
একাত্তরের পূর্ব পাকিস্তানের কথা বলছি,
মুক্তিকামী যোদ্ধাদের হৃদয়ে ধারণ করা সেদিনকার সেই বাংলাদেশের কথা বলছি।
লক্ষাধিক শহীদের রক্তের রঙ তুলিতে আঁকা
একটা স্বাধীন, সার্বভৌম নতুন বাংলাদেশের কথা বলছি।
অসংখ্য নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে কেনা
একটা উজ্জ্বল বাংলাদেশের কথা বলছি।
ছেলেহারা মায়ের কণ্ঠে গেয়ে ওঠা
সকলের বাংলাদেশের কথা বলছি।
এটাই কি তবে সেই বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ কি শুধুই একটা নাম?
নাকি বাংলাদেশ মানে—
বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে দেওয়া রফিক, শফিকের সেই জ্বালাময়ী স্লোগান?
বাংলাদেশ মানে আশা, ভরসা, মুক্ত স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা...
ভাসানীর সোনার বাংলাদেশ?
সে তো এখন শুধুই কোটি মনের জিজ্ঞাসা!
বাংলাদেশ মানে অন্যায়কে শক্ত হাতে রুখে দেওয়া,
শূন্য হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া।
বাংলাদেশ মানে শান্তি-শৃঙ্খলা, জসীমউদ্দীনের কবিতা...
মুছে দিতে এসেছে শতসহস্র ছেলেহারা মায়ের ক্রন্দন।
আজকের এই বাংলাদেশ—এটাই কি সেই বাংলাদেশ?
এই বাংলাদেশ কার?
এটা আমি বা আমাদের বাংলাদেশ নয়,
এটা ওরা বা ওদের বাংলাদেশ।
যে বা যারা শোনে না কভু জাগরণের কোনো গান;
ক্ষমতার লিপ্সায় কেড়ে নেয় নজরুলের মতো বিদ্রোহী কবিদের প্রাণ।
মজলুমেরে আঘাত করে উজ্জ্বল নক্ষত্র করে ফেলে ম্রিয়মাণ...
এটা ওরা বা ওদের বাংলাদেশ।
আমাদের বাংলাদেশে থাকবে না কোনো উৎপীড়িতের চিৎকার,
মিথ্যার পদতলে চাপা পড়বে না কোনো মহাসত্যের ঝঙ্কার।
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না কোনো অত্যাচারী স্বৈরশাসকের হুঙ্কার;
কালো মেঘ হয়ে জমবে না কোনো মনের কোণে বেকারত্বের মহাভয় আর সংশয়।
জীবনবাতি জ্বলবে মিটমিট, আশা আর ভরসায়;
অন্যায়ের সর্পে ভরাডুবি হবে না ন্যায়ের স্বর্গ।
হাস্যোজ্জ্বল রৌদ্রোজ্জ্বল কোনো লোকালয়,
জয়নুল আবেদীনের ছবির মতো রঙিন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে—
লালসার সেই মহাপ্রাচীর ভেঙে, ষোল কোটি প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে চলো!
তাই এক হই, এক হই...
জাহানারা ইমামের অশ্রুজলে ফুটে উঠুক সোনার বাংলা,প্রতিটি হৃদয়ে বাঁধুক বাসা।
অধরা এমন একটা বাংলাদেশ উপহার দেবে কি আমায়?
সর্বসাধারণের পানে এটাই আমার চূড়ান্ত জিজ্ঞাসা।