কবিতা আমাকে পরের দুঃখে দুঃখী হতে শিখিয়েছে।
হতে শিখিয়েছে শিশুর মতো অনাবিল, সত্যের মতো দৃঢ়, ন্যায়ের মতো সংগ্রামী, নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল।  

যুগের অভিশাপে যখন গোলকধাঁধায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমাকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছে।  
ঠিক-ভুলের দ্বন্দ্বে যখন অগোছালো পরিবেশের অংশ হতে যাচ্ছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমাকে গুছিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।  

সমালোচনার প্রগাঢ় নীল বিষে যখন নিজেকে প্রায় হারাতে বসেছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমাকে লড়ার মানসিকতা জুগিয়েছে।  
না-পাওয়ার আক্ষেপে হতাশার দাবানলে যখন অনবরত পুড়ছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমাকে আশার বাণী শুনিয়েছে।  
অলসতার ঢেউয়ে যখন অজ্ঞতার সমুদ্রে ডুবতে বসেছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমাকে জ্ঞানের নৌকায় ভাসিয়েছে।  

কবিতা আমাকে সহজ হতে শিখিয়েছে,  
হতে শিখিয়েছে স্রোতের মতো দূরন্ত, পাখির মতো চঞ্চল, রাত্রির মতো নীরব, আকাশের মতো বিশাল।  

ঘুমন্ত বিবেকে যখন অন্যায়কে প্রতিনিয়ত কুর্ণিশ করছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমার চৈতন্যে বিদ্রোহের প্রদীপশিখা জ্বালিয়েছে।  
নিষ্ফলা হৃদয়ে যখন রসের খোঁজ করছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমার রসে-খরা জীবনে উল্লাসের উদ্রেক ঘটিয়েছে।  

অতি নিশ্চিন্তে যখন পরগাছা হয়ে তাদের কোলে ঘুমাচ্ছিলাম,  
তখন এই কবিতাই আমাকে চুপিসারে জাগিয়েছে।  
হিংসার কুয়াশা যখন জীবনের সব রঙ ঢেকে নিচ্ছিল,  
তখন এই কবিতাই আবার আমাকে রঙিন ফুলে ফুলে সাজিয়েছে।  

কবিতা আমাকে পূর্ণিমার চাঁদের মতো সুন্দর হতে শিখিয়েছে,  
হতে শিখিয়েছে এভারেস্টের মতো উঁচু, আটলান্টিকের জলের মতো শীতল, মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো গভীর।  

ভুলে-ভরা জীবনে অহরহ ছিল খারাপের সাথে উঠাবসা,  
তখন এই কবিতাই আমাকে ন্যায়ের ঘাটে ভিড়িয়েছে।  
পাপের রাজ্যে আত্মার সুখকে বলি দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতাম না,  
তখন এই কবিতাই আমাকে এক হাতে বাঁচিয়েছে।  

কবিতা আমাকে শিমুলের তুলার মতো নরম হতে শিখিয়েছে,  
হতে শিখিয়েছে নিরাপদ জলের মতো স্বচ্ছ, শিশিরের মতো স্নিগ্ধ, ঝর্ণার মতো মনোমুগ্ধ।  

কবিতা আমাকে ধৈর্য উপহার হিসেবে দিয়েছে,  
কবিতাকে দিতে পারিনি কিছুই।  
সময়কে সাথে নিয়ে একে একে এই জীবন থেকে চলে গেল সবাই,  
কিন্তু সেই কবিতাই আমাকে এখনো একলা আগলে রেখেছে।  
আমি কবি নই, তবু এই কবিতাই আমাকে সঠিক মানুষ হতে শিখিয়েছে।