সে আজো সেই বীজ পুষ্ট হওয়ার অপেক্ষায়-
সে তার মরম বেদনার বিদ্রোহ দেখে যেতে চায়,
তবে বিদ্রোহ তো হয় না, দ্রোহের পাহাড় জমে,
আজ অধিকার চাওয়া যায় না, বিদ্রোহী তবে-
চৌদ্দ শিকেয় ভরে দিবে, হাড় যাবে ক্ষয়ে।
এসব ভেবেই জমির আজ একা হলো,
জমি-জামা সব অন্যায়ের পেটে গেলো ।
অন্ন আসবে কোথায় থেকে এই ভেবে বিপন্ন,
সেবার অর্ধাঙ্গীও পাড়ি জমালো তাকে একা রেখে।
আহ্ জমির আজ একাকি আয়ু গুণে
বিপথে যাওয়া সন্তানগুলো, চলে গেল কবেই।
একজনের নাকি খুনের দায়ে হলো ফাঁসি,
অন্যজনের মাদকের থাবায় আর সন্ধান মিলেনি।
কি সুখের জীবন ছিলো জমিরের সেই ঘরে,
বিপ্লবের বীজ বুনে সুখ গেল ক্ষয়ে ক্ষয়ে।
তারপর! তারপর আর কি হলো-
আজ জমিরের শততে পা পড়লো হায়!
শোকের আবেশে সে এখন কান্না ভুলে গেল।
এখন সে একটি বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা,
ভালোই আছে, স্বপ্নগুলো ক্ষয়ে গেছে একেবারে।
তবে আজও সেই বিদ্রোহের স্বপ্ন দেখে সে,
বীজ অঙ্কুরিত হবে, ফসল জ্বলে উঠবে;
সে নিজেকে চিনেছে এতকাল ধরে,
বীজ মন্ত্রকে ধারণ করে নিজের করে।
সে আজও মনে মনে ভাবে তার কল্পিত দ্রোহ!
"জেগেছে জনতা ও বিবেক, পুষ্ট হলো বিপ্লব,
ওহ্ পৃথিবী! ওহে অপশক্তি, ওহে মুখোশধারী-
সময় ঘনিয়ে এসেছে প্রস্তুত থাকো তবে,
অশনি সংকেত বেজেছে, নিঃস্ব হবে চিরতরে।"
তবে এসব শুধুই তার কল্পনার জগত,
বিপ্লবের বীজ অঙ্কুরের আগে চলে যেতে হবে।
আজ কিছুদিন হলো জমিরের চোখে মুখে ক্লান্তি,
নিদ্রিত জগতে এসেছিলো যে তার অর্ধাঙ্গিনী,
সময় বুঝি ফুরিয়ে এলো, বিপ্লব দেখা না হয়!
হঠাৎ কোনো সকালে ডাহুকের কলহ শোনা যায়,
কিন্তু অশনি সংকেত তার নয়! তবে?
পাশের ঘরের অর্ধপাকা দাড়ি ওয়ালা গেল মরে।
সময় বুঝি শেষ হলো , বিপ্লব হলো না দেখা,
নতুন বছরের সূর্য উঠিল, জমির উঠিলো না।
জমিরের দেহের পাশে ছিলো একখানা চিঠি,
"বীজ যদি অঙ্কুরিত হয় কবু, আমি নাহি থাকি-
ফসলের মালা গেঁথে দিও, শোভা পাবে মোর বেদী।"