এক কালে ভাই ভিটা ছিলো,নাম ছিলো তার আড়া!
দিন বলো আর সন্ধ্যা বলো,পথ ছিলো গাঁ খাঁড়া।
যৌথ ছিলো সব পরিবার,ঐক্য ছিলো পাড়া!
একটা লোকের মৃত্যু হলেই,ভেঙে পড়েছে তাঁরা।
সেকালে এক অভাব ছিলো,বন্ধন ছিলো সবার!
আত্মীয় স্বজন দূরদূরান্তের,খোঁজ নিয়েছিলো ক'বার।
রাস্তায় রাস্তায় কাঁদা ছিলো, ছিলো পায়ের ভ্যান!
হালের চাষে গোরু ছিলো, ছিলো বয়োবৃদ্ধর জ্ঞান।
পা কলের সেচ ছিলো, ছিলো টিভি সাদা কালো
আলিফ লায়লা সন্ধ্যাকালীন দেখতেছিলো ভালো।
পাড়ায় পাড়ায় ল্যাম্প ছিলো, ছিলো হারিকেন!
রাত্রি জেগে গুনগুনের ওই পড়ার ছিলো ধ্যান।
হাটটা ছিলো বহুদূরের সাতদিনের ছিলো বাজার
মানত করার হিড়িক ছিলো মহাস্থানের ওই মাজার।
রাস্তা, ব্রীজ ভাঙা ছিলো ভাঙার মধ্যে ছিলো স্রোত
মহামারি বন্যা ছিলো,উঠেছিলো এক ফসলি ঘরোত।
স্কুল, কলেজ ভাঙা ছিলো, তবে শিক্ষার ছিলো মান
মসজিদ মসজিদ মিষ্টি খাওয়ার হিড়িক ছিলো টান।
গাছে গাছে আম ছিলো, ঝড়ে বস্তা ছিলো বোঝাই !
অন্ধধন্ধ মেঘ ছিলো তো,সঙ্গ বেঁধে ঘুরতেছিলো পূজায়।
ভিটার পাশেই বিল ছিলো,নৌকা বান্ধা ছিলো ঘাটে
আখ চরে নৌকা গুলো,চলেছিলো হলদে বগার হাটে।
ক্ষেতে ক্ষেতে আলু ছিলো, ছিলো গ্রাম্য গমের রুটি
জলেঙাতে টাকি,শোল আর খলসে পড়া পুঁটি।
ভিটায় ভিটায় সাঁওতাল ছিলো,শুকুর ছিলো খালে
বছর কামলা বছর ছিলো দুঃস্বসময়ের কালে।
গ্ৰাম্য জুড়ে এক মসজিদই , ছিলো মুসল্লিদের ঢল!
ঝাও-জঙ্গলে টয়লেট মিলো, ছিলো চৌদ্দ গুষ্টির কল।
পাড়ায় পাড়ায় আমোদ ছিলো বড়ো বোনের বিয়ায়
শালীর মুখে পাল্লের কালি দুলোভাইয়েক নিয়ায়।
এক বেঞ্চে ছেলে মেয়ের পড়ার ছিলো কাল
লুকোচুরির,গাদল ছুটের গ্রাম্য জোটের তাল।
হুতুম বসার বাল্য ছিলো,ছিলো আরও জারি-সারি গান
টিভি দেখার হিড়িক ছিলো,ছিলো ভাওয়ালগীতির টান।
পড়ালেখার পাল্লা ছিলো, ছিলো জেগে পড়ার রাত
ভিসিডি-সিডি আসর ছিলো ঘুমেই পল্লী গ্ৰাম কাত।
বায়োস্কোপের পাড়া ছিলো,ছিলো সার্কাসেরই খেলা
বাড়ি বাড়ি চাল তোলানো,ছিলো বয়াতিদের মেলা।
চারআনা আর দশপয়সায়,ছিলো একটাকার ওই মেঠাই
পান্তা আর খুদ সিদ্ধোর ওই, ছিলো গ্ৰাম্য মাটি কাটাই।
গ্ৰাম্য জুড়ে পুকুর ছিলো, হাতে ধরা; মাছের ছিলো পাড়া
বোয়াল মারার বর্ষি ছিলো, ছিলো পদীর বিলে খাড়া।
সমাজের এক বিচার ছিলো গ্ৰাম্য দেওয়ান নিয়া
বাড়ি বাড়ি রাস্তা ছিলো,রাস্তা দিয়ে যায়নি যাওয়া মিয়া।
বারে বারে ঝড় উঠেছিলো,হাসসুরো ছিলো নাম
খেড়ি-খড়ের ঘর ছিলো তো ভাঙে পড়ার কাম।
গবাদি ফেলার ডুবরি ছিলো ব্যাঙ খাকো এক দল
দরবেশেরই বাবরি সেজে আহলে হাজীর বল।
অমাবস্যার দিন ছিলো ছিলো তিতা খাওয়ার ধুম !
খোসকা গাছে ফুলের কথা লৌহ সেঁকায় হারিয়ে যাওয়া ঘুম।