কত উপন্যাস, কত গল্প পড়েছি—
মনের গভীরে জমেছে অগণিত চরিত্র,
তবু তোকে পড়া হলো না।
তোর চোখের ভাষা, ঠোঁটের অর্ধেক উচ্চারণ,
তোর চুলের এলোমেলো বাতাস,
তোর নীরবতায় ভরা একেকটি অধ্যায়—
সব যেন রহস্যের কুয়াশায় মোড়ানো।

তোর মুখের হাসি যেন ক্লাসিক বইয়ের সোনালি মলাট,
যেখানে প্রবেশ করার সাহস পাই না,
তোর অভিমান—একটি অসমাপ্ত উপন্যাস,
যার শেষ পৃষ্ঠা হারিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য।

আমি পড়েছি জীবনানন্দের নৈঃশব্দ্য,
পড়েছি রবীন্দ্রনাথের গভীরতা,
হুমায়ূনের সহজ কথাগুলোও—
তবু তোকে পড়া হলো না।
তুই যেন সেই বই,
যার প্রচ্ছদ দেখলে মনে হয়
ভেতরে এক মহাসমুদ্র,
তবুও পৃষ্ঠা উল্টাতে যাই,
উল্টাতে গিয়ে হাত কাঁপে।

তুই কিভাবে এত সহজে জটিল হতে পারিস?
তুই কিভাবে এত অল্পে পূর্ণতা আনতে জানিস?
তুই কি হুমায়ূনের ভাষার মতোই সহজ,
নাকি জীবনানন্দের চাঁদের মতো,
যাকে ছুঁতে গিয়ে আঙুল ফসকে যায়?

অথচ আমি তোকে পড়তে বসি প্রতিদিন,
তোর হাঁটার ছন্দে খুঁজি কোনো কবিতার কথা,
তোর মুখের দিকে তাকিয়ে
চেষ্টা করি অনুধাবন করতে তোর প্রারম্ভিক লাইন।
তোর উপস্থিতি যেন অসমাপ্ত গল্পের মতো,
যা শুধু প্রতীক্ষায় রাখে,
শেষের আশা দিয়ে।

তুই কি জানিস, তুই নিজেই একটা গ্রন্থ?
তোর নিঃশ্বাসের শব্দগুলো কবিতা হয়ে উঠে,
তোর হাঁটার ছন্দ যেন উপন্যাসের বুনন।
তুই যখন কথা বলিস,
তোর প্রতিটি শব্দ যেন আলাদা চরিত্র—
সবাই একটা গল্প বানিয়ে ফেলে।

তুই কি আমাকে পড়তে দিবি,
নাকি আমি নিজেই ভুল পদ্ধতিতে পড়েছি তোকে?
তুই কি হিমুর মতো,
যে হাঁটে নিজের পথে,
পিছনে তাকায় না?
নাকি তুই মিসির আলির মতো,
যে কেবল যুক্তির আলো ছড়ায়,
কিন্তু নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখে?

তুই কি করে বলবি,
কোন অধ্যায়ে আমি থেমে গেছি?
কোন লাইনটা আমার বোঝা উচিত ছিল?
আমি তোকে পড়তে চাই,
কিন্তু তুই যেন প্রতিদিন নতুন হয়ে যাস,
তোর নতুন নতুন অধ্যায়ে হারিয়ে যাই আমি।

তুই কি বলবি কবে,
এই গল্পের শেষ কোথায়?
নাকি তুই সেই চিরন্তন বই,
যার কোনো শেষ নেই,
যার পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে
মানুষ জীবন পার করে দেয়?