কিছু কথা ছিল, যা বলা হয়নি কোনোদিন। তারা বুকের গভীরে লুকিয়ে ছিল, লাজুক শিশুর মতো। যখন সন্ধ্যার রোদ্দুর পৃথিবীর কোলাহল স্তব্ধ করে, তখন সেগুলো ধীরে ধীরে ফিসফিস করে ওঠে, যেন আকাশের তারাদের সঙ্গে মিশে যায়।

কিছু কথা ছিল, যার গায়ে মধুর বিষাদের পরত। পাতা ঝরার মৃদু শব্দে, শিরশিরে বাতাসের মর্মরে, তাদের স্পর্শ পাওয়া যেত। কেউ শোনেনি তাদের, কেবল একটি হৃদয় জানত সেসব নীরব ভাষা।

কিছু কথা ছিল, যেখানে ছিল প্রিয়তমের চোখের অব্যক্ত আকুতি। একরাশ লেখা হয়নি এমন চিঠির ব্যথা। তারা একবার সাহস করে ঠোঁটের কিনারে এসে থেমে যেত, হারিয়ে যেত কোনো অনুচ্চারিত দীর্ঘশ্বাসে।

কিছু কথা ছিল, যেগুলো এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ের মধ্যে গলিয়ে ছিল। সেই চায়ের কাপে চুমুক দিলে মনে হতো, হৃদয়ের গভীরে একটি অদ্ভুত শান্তি যেন জেগে উঠছে। যেন কোনো গোপন স্মৃতির ছোঁয়া আঁকা ছিল তার গায়ে।

কিছু কথা ছিল, যা রাতের নীরবতায় ভেসে বেড়াতো। তারা জেগে উঠত কোনো নিঃসঙ্গ গানের সুরে, গলির মোড়ে এক একাকী কিশোরের বাঁশির আওয়াজে, অথবা বিদায়ী ট্রেনের করুণ হুইসেলে।

কিছু কথা ছিল, যেগুলো ছোট ছোট স্বপ্নের ছায়া হয়ে বেঁচে থাকত। চাঁদের গুঁড়ো আলো, কাঁচের মতো ভেঙে যাওয়া মুহূর্তগুলো। সেগুলো হাতে তুলে নিয়ে কেবল তাকিয়ে থাকতাম, ছুঁতে সাহস হতো না।

কিছু কথা ছিল, যা উচ্চারিত হলে হয়তো জীবন বদলে যেত। নক্ষত্র খসে পড়ত আকালে, নদী বদলাতো তার পথ। তারা ছিল শীতের ভোরের দমকা হাওয়ার মতো—ঠাণ্ডায় কাঁপিয়ে দিয়ে মুহূর্তেই মিলিয়ে যেত।

কিছু কথা ছিল, যেগুলো চোখের জলে লেখা হতো। তাদের ভাষা ছিল তিক্ত-মধুর, অথচ অক্ষরহীন। হয়তো তারা নিঃশব্দ রোদনে পরিণত হতো, বুকের গভীরে চুপটি করে বসে থাকত।

কিছু কথা ছিল, যেগুলো ছিল পাহাড়ের চূড়ায় বসে থাকা এক পাখির মতো। দূরের দিগন্তে চোখ রেখে শুধু উড়তে চাইত। তারা মুক্তি খুঁজে বেড়াতো অথচ জানত না, কোথায় শেষ হবে তাদের যাত্রা।