হারিয়েছি অনেক কিছুই—
শৈশবের মেঘ, জলপথের ঘ্রাণ,
সন্ধ্যার ভাঙা রঙে মিশে থাকা একলা দুপুর।
হারিয়েছি অলীক সেই স্বপ্নগুলি,
যারা ঘুম পাড়িয়ে দিত কচি বুকের ভাঁজে।
আজ আর হারানোর কিছুই নেই—
জীবন এখন শূন্যতার স্রোতে ভাসমান,
যেখানে অনুভবের মাটি খুঁজে পায় না শেকড়ের আশ্রয়।

আমার দিনগুলো বালুচরে দাঁড়িয়ে আছে,
ঢেউয়ের পথ চেয়ে থাকে একাকী তীরের মত,
যেখানে নদী আর ফিরে আসে না।
হারিয়েছি বন্ধুর হাতে লেখা শেষ চিঠি,
হারিয়েছি বইয়ের পাতায় রাখা শুকনো গোলাপের পাপড়ি।
মনে পড়ে সেই রাত্রিগুলো—
চাঁদের আলোয় ছড়িয়ে পড়া মৌন কথোপকথন,
যা আজ ধুলো হয়ে মিলিয়ে গেছে
স্মৃতির অন্ধকারে ছায়াপথে।

যে পথে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়েছি,
তার প্রতিটি বাঁক আজ চেনা হয়ে গেছে।
তবু তাতে নেই কোনো সান্ত্বনা।
হারানো দিনগুলো সত্যি কি হারিয়ে যায়?
অথচ তারা ফিরে আসে মাঝরাতে,
স্বপ্নের চাদর জড়িয়ে।
তারা জাগিয়ে তোলে সেই পুরনো ক্ষতগুলো,
যা আমরা ভুলে যেতে চেয়েছিলাম বহুদিন আগে।

জীবনের পরম শান্তি কি এই শূন্যতায়?
নাকি শূন্যতার গভীরে লুকিয়ে আছে
একটি অদেখা পথ—
যেখানে অপেক্ষা করছে এক নতুন ভোরের সম্ভাবনা?
হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেই কি লুকিয়ে থাকে
পুনর্জন্মের কোনো গোপন গান?
জীবনানন্দের মত আজ আমিও ভাবি,
এই শূন্যতার গভীরে হয়তো রয়ে গেছে
এক অনন্ত সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের আলোর পথ।

তুমি কি জানো,
আমরা হারাই—
আর সেই হারানোর মধ্যেই খুঁজে পাই
নতুন কোনো আকাশ।
আজ আর হারানোর কিছুই নেই—
এই কথাটাই তো জীবনের চিরন্তন ছন্দ।