তোমার প্রতি আর কোনো অভিযোগ নেই,
অভিমানও নয়।
তাই নিজেকে এই ছাব্বিশ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করে রেখেছি।
যতদিন বেঁচে আছি থাকবো এভাবেই,
দিন যায়, রাত আসে—
কেউ বুঝতে পারে না আমার সময়ের হিসাব।
জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো যখন ছড়িয়ে পড়ে মেঝেতে,
আমি কষ্টের পর্দা সরিয়ে তাকিয়ে থাকি,
মেঘের ভেলার ওপরে ভাসমান এক দূর অস্তিত্বের দিকে।
যোজন যোজন দূরে থেকে সেই মেঘে ভেসে আসে—
অচেনা ভায়োলিনের সুর,
স্মৃতির মতো ধোঁয়াটে, অস্পষ্ট—
মনে হয় যেন তোমারই কোনো রূপে,
ফিরে আসার সংকেত বয়ে আনে।
আমি এক নিঃসঙ্গ পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকি,
আশ্রয়হীন, ভারাক্রান্ত অপেক্ষায়।
ফ্ল্যাটের শীতল কাঁচের দেয়াল ঘিরে রেখেছে আমাকে,
বাইরে ভাসে মেঘেরা, সময়ের অতল বিস্তারে।
আমি তাকিয়ে থাকি—
একটু ভালোবাসা, একটু সান্ত্বনার জন্য।
তুমি ফিরে আসবে কিনা জানি না,
তবু মেঘের ভাঙা সুরে বাঁধা সেই গান শুনি,
যেখানে নদীর কোলাহল মিশে গেছে মেঘের গর্জনে,
আর আমি সেই শব্দের মাঝে একাকার হয়ে যাই।
এখানে কোনো বাতাস আসে না,
তোমার উপস্থিতিতে মনে হতো—
সমস্ত কিছুই যেন ছুটে আসছে আমার দিকে—
তোমার স্পর্শ, হাসি, সেই দৃষ্টি,
যা মুছে দিত একাকীত্বের সমস্ত বেদনা।
এখন শুধু বৃষ্টি নামে,
তোমার মতো করেই।
মেঘের স্তরগুলো মনে করিয়ে দেয়
আমাদের সেই মিশে যাওয়া দিনগুলোর কথা,
যখন ছায়া ছুঁয়ে দাঁড়াতাম আমরা,
আকাশের নিচে দুই পথিক—
একই গন্তব্যের খোঁজে।
আজ আমি একা,
মেঘেরা ভাসে দূর থেকে দূরে,
পাহাড়ের চূড়া বেয়ে বাতাসের মতো
অজানা দিগন্ত ছুঁয়ে যায়।
কখনো কখনো অতীতের ছায়া হয়ে ফিরে আসে,
দেয়ালের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ে আমার আবেশিত যন্ত্রণার গভীরে,
যেন তুমি এসেছো অদৃশ্য কোনো রূপে,
তোমার ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছো দিগন্তের ওপারে,
যা আমি অনুভব করতে পারি,
তবে ছুঁতে পারি না, কোনোদিনও।
মেঘেরা বলে যায় একটাই গল্প—
তোমার ফিরে আসার গল্প।
তোমার ছায়া আজও মেঘের সাথে ভাসে,
আমি তাকিয়ে থাকি দূরের শূন্যতায়,
অজান্তেই যেন জানি—
তুমি আর আসবে না,
তবু মেঘেরা সেই ভুল ভাঙায় না,
ভাঙবেও না, কোনোদিন!
শুধু শুধু অপেক্ষায় রয়ে গেলাম।