এই শূন্য শহরে গভীর রাত নামে—
নির্জন ছায়ারা ঘুমায় অলিগলির কোণে,
পথেরা ভুলে যায় তাদের চিরচেনা জ্যোৎস্নার গান।
দেয়ালের ফাটলে বুনো লতা গুটিয়ে থাকে চুপচাপ,
চাঁদের আলোয় কেবল দাঁড়ায় বিবর্ণ স্মৃতিরা—
তাদের কণ্ঠ নেই, তাদের চোখ নেই,
তবু শোনায় এক অপূর্ণ দুঃখের কথা।
জানো, এই রাত্রি শুধু একা নয়,
সে বহন করে হেমন্তের শেষ চিঠি,
হাতছাড়া করা স্বপ্নের ম্লান কাহিনি।
হাওয়া বয়ে যায়, দূর থেকে আনমনা পাখিদের ডাকে
কেউ কি জাগে— নাকি হারিয়ে যায়
নক্ষত্রের পথ বেয়ে অতীতের কোনো চেনা মুখের কাছে?
তারা যেন একা— ঠিক যেমন এই শহর।
জীবনের খাঁ খাঁ দুপুরে বয়ে যাওয়া নদী
মিশে গেছে নিঃশব্দ সমুদ্রে;
তাদের কথারা আজ কেবল পাথরের ভাষা।
বসে আছি এখানে, অচেনা বৃক্ষের নীচে—
তাদের ডালপালা ছুঁয়ে গেছে অন্ধকার আকাশ।
আমি কী খুঁজছি?— কে জানে!
শুধু মনে হয়, অজানা কিছু দূরে ডাক দেয়,
তাকে ছুঁতে পারব না— জানি, তবু যাই।
এ শহরে ছিল আলো, শব্দ, মানুষের হাঁটা-চলা,
তাদের মুখে মুখে ছিল জীবনের গান।
কিন্তু আজ, এ সব কিছুই যেন বেমানান।
এ শহর ক্লান্ত, এ শহর বোবা—
তাদের হাত থেকে ফসকে গেছে সময়,
ফুলেরা মরে গেছে, কাঁটা হয়ে আছে তবু।
তারপরও, বাতাসে ঘুরে বেড়ায় পুরনো প্রেমের ঘ্রাণ,
তাদের পদচিহ্নে রয়ে যায় স্মৃতির ছাপ।
এখন শুধু শূন্যতার ছায়া—
গলি বেয়ে বয়ে যায় হাওয়ার নিশ্বাস,
আমার চোখে জেগে ওঠে অস্পষ্ট কোনো স্বপ্ন।
আমি তাকিয়ে থাকি— সেই রাত্রির দিকে,
যা ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছে তার কালো চাদর।
জানো, আমাদের ফেলে আসা গল্পেরা
একদিন কি আবার জাগবে?
নাকি, এই শূন্যতা চিরকালীন হবে?
গভীর থেকে গভীরতর হয় রাত,
শূন্য শহর আরো শূন্য হয়ে যায়।
আমি একা, খুব একা—
পথ হারানো এক পুরনো ভ্রমণকারী—
অচেনা কোন রাত্রির আলোর অপেক্ষায়
এখানে, শূন্যতার ঠিক মাঝখানে।
আলো আসবে কি?— জানি না, তবু অপেক্ষায় থাকি।