আমার তখন হামাগুড়ি দেওয়ার বয়স
কিংবা তারও চেয়ে কম,
ঘরের মেঝে ছিল আমার আকাশ,
আর দেয়ালের কোণ ছিল অচেনা গুহা।

আমি তখন শব্দ চিনতাম না,
তবু শব্দেরা আমাকে চিনত,
মায়ের ঠোঁট থেকে ঝরত নরম সুর,
বাবার কাঁধ ছিল ছোট্ট এক পাহাড়।

আমার হাত পড়ত মাটির ওপর,
আমি অনুভব করতাম শীতলতার গান,
আমি টেনে তুলতাম ধুলোর স্তর,
যেন ইতিহাস ঘেঁটে দেখছি পূর্বপুরুষের পদচিহ্ন।

আমার পৃথিবী ছিল চার হাত দূরত্বে,
বিছানার কিনারায় ছিল এক অজানা সীমান্ত,
কোণায় রাখা কাঠের আলমারি ছিল পর্বত,
আর জানালার বাইরে ছিল এক অচেনা গ্রহ।

আমি তখন বুঝতাম না রঙের ভাষা,
তবু লাল-নীল-হলুদ আমাকে ডাকত,
সূর্যের আলো পড়ত চোখে,
আমি তাকে ভেবে নিতাম এক আগুনের নদী।

আমার তখন শব্দের বোঝা ছিল না,
তবু আমি কান পাততাম বৃষ্টির শব্দে,
আমি শোনার চেষ্টা করতাম বাতাসের ফিসফাস,
আমি ভাবতাম— গাছেরা কথা বলে কি না।

আমি তখন সময় বুঝতাম না,
তবু ভোরের আলো ছিল স্বপ্নের দোরগোড়ায়,
বিকেলের ছায়া ছিল এক বিস্ময়,
আর রাত ছিল এক গা ছমছমে গল্প।

আমি তখন প্রেম বুঝতাম না,
তবু মায়ের কোলে মাথা রাখলেই ঘুম আসত,
তার চুলের গন্ধ ছিল সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়,
আর বাবা ছিল এক দুর্বোধ্য রহস্য।

আমার তখন পৃথিবী ছোট ছিল,
তবু প্রতিটি কোণ ছিল একেকটি মহাদেশ,
প্রতিটি দেয়াল ছিল অসীমতার সীমানা,
আর প্রতিটি মুহূর্ত ছিল এক অনন্ত বিস্ময়।