নিস্তব্ধ সন্ধ্যা নামে—
নগরীর শেষ প্রান্তে, একা দাঁড়িয়ে থাকে নদী,
তার জলে ছায়া ফেলে নিঃশব্দ শালগাছের সারি।
আলো নেই, তবু বাতাসে ভেসে আসে দিনের শেষ সোনালি রেশ,
মাটির উপর নেমে আসে রাত্রির কোমল অন্ধকার।
পায়ের নিচে শুকনো পাতার মৃদু শব্দে যেন কথা বলে এক পুরোনো ইতিহাস,
তুমি শুনতে পাও? এই নির্জনতায়ও এক সময় ছিল স্পন্দন।

পথে আমি একা হেঁটে যাই—
নিস্তরঙ্গ আকাশের নিচে, কাদা ভেজা মাটির পথ বেয়ে।
যেন আকাশের চাঁদও ক্লান্ত, তার আলোর রেখায় বিষণ্ণতা মিশে গেছে,
আমার শরীরেও জমেছে সেই অচেনা ক্লান্তি,
যেন বহু যুগ ধরে আমি হেঁটে চলেছি এই শূন্যতার পথে।
তবুও কোথাও মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে একটুকরো নরম আলো,
যা সময়ের সাথে গলে গিয়ে মিশে যায় পৃথিবীর নিস্তব্ধতায়।

তুমি হয়ত দূরে—তোমার ছোঁয়া এখনো মিশে আছে বাতাসে,
তোমার ফেলে যাওয়া রুমালে লেগে আছে গত বর্ষার শেষ বৃষ্টি,
মনে পড়ে সেই দিনের দীর্ঘশ্বাস,
যা নদীর জলে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরেছিল বারবার।
রাতের অন্ধকারে আমি সেই প্রতিধ্বনি শুনি,
তোমার চলে যাওয়ার ছায়া মিশে যায় রাত্রির সাথে,
আর আমি বসে থাকি চুপ করে, নদীর কোল ঘেঁষে।

বৃক্ষের ডালে ঝুলে থাকে কিছু অসমাপ্ত স্বপ্ন,
যারা হয়ত কোনোদিনই পূর্ণ হবে না—
আলো-ছায়ার খেলায় তারা হারিয়ে যায়,
আমার হৃদয়ের গহীন কোণে গেঁথে থাকে।
এই নদী, এই আকাশ—সবকিছুই যেন এক ছন্দহীন সুরের মতো,
যেখানে বেদনার নীরব সংগীত বাজে।

তবু আমি হেঁটে যাই—
আলো নেই, তবুও পথের শেষে হয়ত থাকবে নতুন কোনো ভোর,
জীবনের প্রতিটি বাঁকে জমা পড়ে কষ্ট, স্মৃতি আর ভালোলাগা।
নদীর স্রোত যেমন থেমে থাকে না,
তেমনি আমিও চলে যাই এক অজানা গন্তব্যের দিকে।
তুমি আসবে না জানি, তবু এই সন্ধ্যা, এই পথ—
সবকিছুই তোমার স্মৃতিতে ঘিরে রয়ে যায়।