হেমন্ত যেন এসে দাঁড়ালো দরজার সামনে, এক মায়াময়ী প্রতীক্ষা নিয়ে, চোখে অপরূপ হিমের দ্যুতি। নিকষ কালো রাতের কান্না ভুলিয়ে দিয়ে, হাওয়ার শিরায় ঝিম ধরে এল, ঠাণ্ডা স্রোতে ভেসে চলল স্মৃতির নদী। সেই নদী, যেখানে রেখেছি অগুনতি স্বপ্নের কাব্য।
রাতগুলো লম্বা হতে থাকে, যেন শব্দহীন পাখা মেলে উড়ে যেতে চায় নিঃসঙ্গতার দেশে। শব্দ ভেঙে গেলে, সে রাতের ভিতর ছিটকে পড়ে আমার গোপন চিঠি, যা কখনো পাঠানো হয়নি। কিছু কথা, যা ছিল শুধু আমার, আর কিছু হাসি, যা আমার ঠোঁটেই ছিল বন্দি।
তোমার ছায়া দেখা দেয় অদৃশ্য রঙে, দরজার ফাঁক দিয়ে ঢোকে বেদনার ঘ্রাণ। হেমন্তের হিমেল স্পর্শে, ক্ষণিকের তৃপ্তি পাই। সেই স্পর্শ বলে, ‘বেঁচে আছো, এখনও।’ ভাঙা জানালা দিয়ে প্রবাহিত বাতাসে হাহাকার করে মন।
এমনই এক রাতে, হেমন্তের ছোঁয়া দিয়ে জেগে ওঠে বৃষ্টি, যা কখনও মাঠে নামে না, শুধু বুকের গভীরে বেজে ওঠে। মনে হয়, পৃথিবীর সব প্রতীক্ষা যেন এখানেই শেষ হয়, এ ঘরেই জমে থাকে সময়। আলোর আড়ালে লুকিয়ে থাকে প্রহর।
হেমন্তের কুয়াশা ভেসে আসে দিগন্তের দূর থেকে,
তাকে ছুঁতে চেয়ে আমি জানালা খুলে দিই।
হেমন্ত জানে, সে আসে জিজ্ঞাসা করতে—
কোথায় শেষ হলো ভালোবাসার গল্প,
কোথায় শুরু হলো বিস্মৃতির অধ্যায়।
পদচিহ্ন রেখে যাও, অন্তত স্মৃতির পাতায়, তবুও।
যেন এ বসন্তেও মনে থাকে হেমন্তের আসা, তার মৌন হাহাকার, তার স্নিগ্ধ দৃষ্টির অনুরোধ।