ভেবেছিলাম তুমি ফিরে আসবে।
তুমি আসবে না—জানতাম, তবু ভেবেছিলাম।
পরকীয়াগামী মেঘ এসে দাঁড়ায়,
আমার বাড়ির সীমান্তে, ঠিক পেরেক-ঠোকা বেড়ার পাশটায়।
মেঘেরা জানে না বেড়ার ওপারে তুমি নেই,
তবু তারা আসে, যেন কিছু বলবে, কিছু শোনাবে।

বাড়ির পেছনের পুরনো গাছগুলো
একটা একটা করে ঝরে পড়ে,
আর সেই গাছের নীচে পোকামাকড়ের ভিড়,
তাদের কারো মুখে তোমার কথা নেই।
তোমার নাম বললেই নাকি তারা থেমে যাবে,
শুনেছিলাম এমন গল্প, কিন্তু আজ তারা গিলতে থাকে শুকনো পাতা।

আমি তাকিয়ে থাকি মেঘেদের দিকে,
তারা ভিজিয়ে দেয় শূন্য উঠোন,
ঘাসেদের শরীরে জমে থাকা ধুলোর অক্ষর মুছে ফেলে।
তোমার নাম সেখানে লিখতে গিয়েছিলাম একদিন,
কিন্তু প্রতিবার ভুল হয়ে যায়,
তোমার নামের অক্ষরগুলো যেন ফাঁকায় ভেসে থাকে।

মেঘেরা চলতে থাকে—
কখনো ধীরে, কখনো দ্রুত।
তারা ঘরে ফেরে না, যেমন তুমিও ফিরলে না।
তাদের গায়ে জড়ানো বৃষ্টির ছেঁড়া কণাগুলো
তোমার মনের মতো করেই আমার জানালায় ছুঁড়ে দেয়।
আমি জানি, সেগুলোও ঠুনকো সান্ত্বনা,
তোমার অনুপস্থিতির বিরুদ্ধে ছোট্ট বিদ্রোহ।

তবু প্রতিদিন আমি এই সীমান্তে বসে থাকি,
ভেবে নিই, হয়তো তুমি আসবে।
মেঘেরা আসে, ভেঙে পড়ে, আবার চলে যায়,
তোমার প্রতিশ্রুতির মতোই অনিয়মিত।
তুমি বলেছিলে, ফিরে আসবে,
বৃষ্টি শেষে, ঝড় থামার পর,
সবুজে সবুজে ভরে গেলে পথ।

কিন্তু ঝড় থামে না,
বৃষ্টি গলে পড়ে রক্তাক্ত পুকুরে।
সবুজ মানচিত্রে লাল দাগের মতো কেঁপে ওঠে আমার অপেক্ষা।
মেঘেরা এবার বিদায় নেয়, তবু আশ্চর্য,
তারা আমার জন্য একটা শব্দ রেখে যায়—
তোমার নাম।
কিন্তু আমি জানি, সেই নামও আমার নয়।

তুমি ফিরবে না—এ কথা এখন আমি জানি।
তবু মেঘেরা ঠিকই আসে।
তারা পরকীয়ার মতো উদাসীন,
আমার বাড়ির সীমান্তে এসে দাঁড়ায়।
তোমার নামের প্রতিধ্বনি তুলে,
আকাশ ভরে তোলে মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ঢেউয়ে।

আমি শুধু চুপচাপ শুনি,
তোমার নাম, আমার শূন্যতা, মেঘের গুঞ্জন।
এটাই হয়তো শেষ কথা,
মেঘেরা বলবে, আমি শুনব,
আর তুমিই থাকো চিরকাল অনুপস্থিত।