পথে নেমে দেখি, আজ বৃষ্টির ঘ্রাণ নেই শহরের বুকজুড়ে।
মেঘের ছায়া মিশে গেছে ফ্লাইওভারের নিচে,
যেন হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকের অভিমান।
তুমি তো জানো, এ শহর বড় বিষণ্ণ।
ধুলো আর কাঁচের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নেরা থমকে দাঁড়ায়—
বাতাসের ঘনঘটা ছুঁয়ে যায় চোখের জলে।
প্রতিটি সন্ধ্যা এখানে নীরবে গড়ায়—
হলুদ বাতির নরম আলোয় গলিপথ ঢেকে যায় এক অচেনা নীরবতায়।
কিন্তু কে জানে, কেন এই নীরবতার ছায়ায়—
কারা যেন হাঁটে, মুখ গুঁজে, মাথা নিচু করে?
কোথায় যেন ছুটছে এইসব অচেনা মানুষ?
চোখে মুছে যাওয়া ধুলোর কণা—
তারাও খুঁজে বেড়ায় কোনো এক শান্ত নির্জনতা।
তুমি কি দেখেছো? সন্ধ্যার মিঠে আলোয়—
ফুটপাথের ধারে ছোট ছোট দোকানগুলো জ্বলে ওঠে মিটিমিটি,
তাদের জানালায় ছায়া ফেলে এক পা ফেলে রাখা বৃদ্ধা।
শহরের কোলাহলে চাপা পড়ে যায় তার বয়সের দীর্ঘশ্বাস—
মনে হয় যেন, প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে একটা করে সময় নিঃশেষ হয়।
এইখানে কেউ ফেরে না, কেউ ঠোঁট ছুঁয়ে বলে না—
“ফিরে এসো, প্রিয়। আজ রাতের শেষ ট্রেন ধরে চলে এসো।”
শহরের বুকভরা ভিড়ে হারিয়ে যায় মুখ, গন্ধ,
কথার মিহিনতা।
শুধু রয়ে যায় অজানা গল্পের বুনন—
আলো আর অন্ধকারের মাঝখানে হারানো কষ্টের রেখা।
রাত গভীর হলে,
সড়ক বাতির নিচে বসে থাকে এক নিঃসঙ্গ মানুষ,
তার চোখে ঢেউ ওঠে বিষাদ—
তার স্বপ্ন ভেঙে গলে পড়ে—
রাস্তার ধারে নুয়ে থাকা গাছের ছায়ায়—
সে খুঁজে বেড়ায় এক ফেলে আসা দিনের উষ্ণতা।
আশ্চর্য এই শহর, যেখানে অচেনা গান ভেসে আসে
রাস্তাঘাটের দেয়াল ফুঁড়ে—
যেখানে জানালার ফাঁকে ছুঁয়ে যায় গোধূলির রঙ।
তুমি কি শুনতে পাও? পাতার দুলুনিতে,
বাতাসের গুঞ্জনে—
কেউ যেন ডাকে, কেউ যেন বলে,
“এখানে কোনো রূপকথা নেই, শুধু আছে নির্জনতার ব্যথা।”
তাই তো বোধহয়, হঠাৎ হঠাৎ আমাদের স্বপ্নগুলো জেগে ওঠে—
চমকে উঠে দেখি, আকাশ জুড়ে শুধু শূন্যতার নীল।
স্মৃতিরা জড়ো হয়, মেঘের মতো—
তারপর মিলিয়ে যায় রাতের নিস্তব্ধতায়।
কোথাও রয়ে যায় না কোনো প্রতীক্ষা,
শুধু একগুচ্ছ শূন্যতা—
শহরের চিহ্নহীন পথে হারিয়ে যাওয়া সেইসব মানুষ—
যারা জানে না, কোথায় থামবে তারা।
মুখে মুখে শুধু বাতাস বয়ে আনে এক পুরনো দিনের শীতলতা।
তুমি কি দেখেছো, সন্ধ্যার নক্ষত্রেরা কাঁপে—
যেন কোনো আগন্তুকের পদধ্বনি ছুঁয়ে যায় দূরের রাস্তাগুলো।
আলো-ছায়ার খেলায় ঢেকে যায় চেনা-অচেনা—
একসময় সব মিশে যায়, সব হারিয়ে যায় অগোচরে।
শহরের প্রতিটি দেয়ালে আঁকা হয় এক নতুন গল্প—
কোনোটা অর্ধসমাপ্ত, কোনোটা ভাঙা,
কিন্তু সবই একদিন হয়ে যায় ধুলোর মতো,
সময়ের মতো অস্পষ্ট।
তোমার চোখে কি আজও সেইসব গল্পেরা জেগে ওঠে?
নাকি হারিয়ে গেছে ধুলোর আস্তরণে, কাঁচের ভিতরকার আলোয়?
এই শহরের শরীরে ভাঙা পথের ক্ষত,
তবু কেউ জেনে যায় না তার অন্তর্লীন বেদনা।
দিনের শেষে, সে অপেক্ষা করে—
কারা যেন আসবে, কারা যেন ছুঁয়ে দেবে—
কিন্তু রাত বাড়ে, গল্পেরা থামে,
শুধু রয়ে যায় এক নিঃসঙ্গ বাতাস—
আর ছড়িয়ে পড়া কিছু স্মৃতির ধুলো,
যারা কোনোদিন ফিরে আসে না।