বাতাসে আজ অদ্ভুত এক গন্ধ—
সমুদ্রের নোনা জলের নিকটে দাঁড়িয়ে আছি,
বালুকাবেলা নীরব হয়ে যায় ধীরে ধীরে,
তেমনই যেন এই শহরও ক্রমশ মিশে যাচ্ছে কুয়াশার ভিতর।
পথের ধারে নিরবে দাঁড়ানো বৃক্ষ,
একটুখানি রোদ্দুরের আলো খোঁজে—
কত শতাব্দী কেটে গেছে তার জানা নেই।
আকাশের গায়ে লেগে থাকা মেঘগুলো,
গলিয়ে দিচ্ছে এক নতুন দিনের স্বপ্ন—
হয়তো কখনো দেখিনি এমন কোনো সময়।
নীলিমার সীমানায় হারিয়ে যাওয়া পাখিরা,
ফেলে গেছে তাদের কিছু স্মৃতি,
সেই স্মৃতির ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চেয়ে দেখি,
দূরের নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে,
কালের স্রোত নিয়ে চলে যাচ্ছে অজানা কোনো গন্তব্যে।
অতীতের পথে হেঁটে যাওয়া মানুষগুলো কি আর কখনো ফিরবে না?
নির্জন এই শূন্যতা আমাদের ঘিরে রাখছে,
যেমন জোনাকি আলো এসে পৌঁছায় দিগন্তের সীমানায়।
একটু ছায়া, একটা পথ—সবকিছু কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে নীরবতার সমুদ্রের গভীরে।
হয়তো এভাবেই দিনের শেষ সূর্যাস্তের দিকে আমরা সবাই হেঁটে যাই, হেঁটে যাই একা একা—
হৃদয়ের কোন গোপন কোণে যেন জমে আছে
দুঃখের এক ছায়া, আর রাত্রির গভীরতম শব্দগুলো শুনতে পাই তার ফাঁকে ফাঁকে।
কখনো সেসব কথা বলা হয় না,
নিঃশব্দে হারিয়ে যায় সময়ের সঙ্গে।
পাহাড়ের উপত্যকায় যে মেঘ এসে জমেছিল,
তার ভেতরেও কেমন যেন এক নীরবতা লুকিয়ে আছে,
তার চোখে চোখ রেখে কিছু বলা যায় না,
শুধু অনুভব করা যায়।
আশ্বিনের সন্ধ্যা আসে নিভে যাওয়া প্রদীপের মতো, আর শরৎ কাশফুলের গন্ধে মিশে থাকে সেই স্মৃতির বিভায়, যা একদিন চিরদিনের মতো হারিয়ে যাবে
আমাদের স্পর্শ থেকে।
রাত্রির আঁধারে যে তারা জ্বলে উঠে,
তারও আছে একটা স্বপ্নের গল্প।
বাতাসে উড়ে যাওয়া পাতার মতো,
সেই গল্পও কালের অতলে হারিয়ে যায় দিনশেষে।
তবু আমি দাঁড়িয়ে থাকি, সময়ের প্রবাহে ঢেউয়ের মতো বয়ে যাওয়া জলের দিকে তাকিয়ে।
পথের ধারে একটা স্রোতস্বিনী বয়ে যাচ্ছে,
তার সঙ্গেই যেন মিশে যাচ্ছে আমাদের দিন।
কোথাও কেউ অপেক্ষা করছে, তার স্পর্শে বয়ে আনে অদ্ভুত এক শীতলতা।
সেই শীতলতা আমাদেরকে গভীরতর নীরবতার পথে টেনে নিয়ে যায়। নির্জনতার পাথরের গায়ে লেগে থাকা দিনগুলো যেন জীবনের কিছু অমলিন রঙ।
অন্ধকারে যে রাত্রির গান শোনা যায়,
সেই গান আমাদেরও ভিতর থেকে ভেঙে দেয়।
একটি দূরের পাখি ডেকে ওঠে,
তার ডানার স্পর্শে ভাঙে অচেনা সময়ের প্রাচীর।
তবু আমরা হেঁটে চলি, নদীর পাড়ে, বাতাসের ছায়ায়—
সেই চিরকালীন নৈঃশব্দ্যের দিকে,
যেখানে শুধু রয়ে যায় স্মৃতি, রয়ে যায় অশ্রু কতশত।
তোমার চোখে যে গভীরতা, সেই গভীরতার ভেতর ডুবে থাকা অসীম অপেক্ষা যেন এই নীরবতা।
পৃথিবীর সব মায়া একে একে হারিয়ে যায়,
আর আমরা কেবল পেছন ফিরে দেখি—
যেন একবার ফিরতে পারি নতুন কোন সকালে।।