সময় ২.৩০মিনিট, চারিদিকে নিস্তব্ধ,
এমন সময় ঘরের ডোরবেল বাজছে হঠাৎ করে,
আমার গা শিউরে উঠলো, এত রাত্রে কে হতে পারে?

খোলা জানালা দিয়ে হাওয়া আসছে,
অন্ধকার রাত, মনে ভয় ঢুকে, কিছু বলতে গেলে।
ডোরবেল বেজে যায়, আবার একবার, দ্বিতীয় বার, তৃতীয়, কী করবো, কী ভাববো, মন জুড়ে এক অবর্ণনীয় ব্যাথা।

হাতের কাছে রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে নিলাম,
লাইটটা জ্বালানোর সাহস হলো না, কাঁপা কাঁপা হাতে ধিলাম।
ডোরবেল বেজে যায়, আবার, আবার, কে হতে পারে?
বাইরে তাকাতে গিয়ে দেখি, কিছুই দেখা যায় না অন্ধকারে।

হাতের মধ্যে ভয়ে, মোবাইলটা বন্ধ, হৃৎপিণ্ড কাঁপছে,
এমন সময় মনে হলো, দরজার ওপারে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
একটি ছায়ামূর্তি, নীরব, নিঃশব্দ, দেখছে আমার দিকে,
আমার বুকের মধ্যে যেন ধ্বনিত হচ্ছে ভয়ের ঝড়ে।

তবুও সাহস সঞ্চয় করে, দরজার কাছে গেলাম,
হাত বাড়িয়ে দরজার কাঁটা খুললাম, আর একটি বাতি জ্বালালাম।
সামনে দাঁড়িয়ে এক জন, মুখ ঢেকে, চোখে নীরবতা,
তাঁর দিকে তাকিয়ে আমি বললাম, "কে আপনি, এই রাতে?"

কোনো উত্তর এল না, শুধু নিঃশব্দে সে দাঁড়িয়ে রইল,
তাঁর চোখের গভীরতা, আমার হৃদয়ে ভয় বাড়িয়ে তুলল।
এক পা পেছনে সরলাম, তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে,
ভয়ে ভয়ে বললাম, "আপনি কি চান, কেন এই সময়ে?"

তবুও সে কিছু বলল না, শুধু এক পা বাড়িয়ে এল কাছে,
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, বলল না কোনো কথা।
তাঁর নীরবতা, তাঁর নিঃশ্বাস, আমার বুক কাঁপিয়ে তুলল,
তাঁর অদ্ভুত চোখের দিকে তাকিয়ে আমি হতভম্ব হলাম।

এমন সময় তিনি বললেন, "মা, আমি তোমার ছেলে,
এতদিন পর তোমার কাছে এসেছি, মায়ের কোলে।
মা, আমি হারিয়ে গেছিলাম, বহু বছর আগে,
আজ ফিরলাম, মা, তোমার কোলে, এই রাতে।"

চোখে জল এল, তাঁর মুখে মায়ার চিহ্ন,
তাঁকে বুকের কাছে টেনে নিলাম, দূর করলাম ভয়ের চিহ্ন।আমার ছেলে, এতদিন পরে, ফিরল আমার কাছে,
মায়ের বুকের গভীরে এই নিস্তব্ধ রাতে, বৃষ্টির মাঝে।

আমার চোখের জল যেন থামতে চায় না,
শত দুঃখ, শত বেদনা, সব মুছে যায় না।
তাঁকে জড়িয়ে ধরে, মনে হলো সব কিছু পূর্ণ,
মায়ের কোলের ভালোবাসা, সব বেদনা করে দূর।

ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে, বললাম, "কোথায় ছিলে এতদিন?
কত খুঁজেছি তোমায়, প্রতিদিন, প্রতিরাত, করেছি যত চিন্তা।"
সে মৃদু হাসল, বলল, "মা, হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্ধকারে, অনেক কষ্টে, অনেক পথ পেরিয়ে, আজ ফিরলাম তোমার দ্বারে।"

তার চোখের গভীরে দেখলাম, এক অদ্ভুত ইতিহাস,
যেন কোনো এক যুদ্ধে, সে হেরে গিয়ে ফিরল পরবাস।
তার হাত ধরা, মায়ের স্নেহে ভরা, মন শান্তিতে ভরে,
এই রাতে, এই ক্ষণে, সব দুঃখ হয়ে যায় সরে।

আমি বললাম, "এসো, ঘরে চল, তোমার জন্য সব সাজানো,
তোমার ঘর, তোমার বিছানা, সব তোমার অপেক্ষায় রাখা।"
সে মাথা নাড়ল, মৃদু হাসল, বলল, "মা, তুমি আছো আমার কাছে,
তোমার স্নেহ, তোমার ভালোবাসা, সব পেলাম আমি এই রাতে।"

আমার হৃদয়ে অজস্র অনুভূতি, সব একসাথে মিলে,
বুঝতে পারি না, কী বলবো, শুধু তাকিয়ে থাকি তার দিকে।
আমার ছেলে, এতদিন পরে, ফিরল আমার কোলের তলে,
তার মুখের হাসি, তার চোখের জ্যোতি, সব কিছু করে পূর্ণ।

রাত গভীর হলো, চাঁদের আলো ম্লান হয়ে গেল,
মায়ের কোলের তলে, ছেলে শান্তিতে ঘুমাল।
আমি তার পাশে বসে রইলাম, তার মুখের দিকে তাকিয়ে,
এই মুহূর্ত, এই ক্ষণ, আমার জীবনের সব থেকে মূল্যবান হয়ে।

ভোর হলো, সূর্যের আলো ঢুকল ঘরে,
আমি জাগলাম, ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে।
তার মুখে শান্তির ছাপ, মায়ের স্নেহে ভরা,
এই সুখের মুহূর্ত, জীবনের সব থেকে বড় উপহার।

আজ থেকে, নতুন শুরু, নতুন দিনের আলো,
মায়ের স্নেহ, ছেলের ভালোবাসা, সব কিছু মিলে গেল ভালো।
এই গল্প, এই কবিতা, আমার জীবনের এক টুকরো স্মৃতি,
মায়ের ভালোবাসা, ছেলের স্নেহ, সব কিছু করে স্মৃতি।