হিমের পরশ মেখে আসে ভোরের আলো,
তৃষ্ণার্ত গাঙচিল ডাকে বিষণ্ণ কুয়াশার ভেতর।
ধু ধু মাঠে শূন্যতার নিবিড়তা, ছায়ায় ঢাকা পথ,
পশ্চিমের আকাশে রক্তিম সূর্য অস্ত যায় যত।

ঝরা পাতার মৃদু ধ্বনি শোনে বটবৃক্ষের প্রাণ,
স্মৃতিরা ভেসে আসে নদীর জলে নিস্তব্ধ, অজান।
বিস্মৃত সন্ধ্যার ছায়া ধীরে ধীরে মুছে যায়,
আকাশের এক কোণে ডুবছে চাঁদের অন্ধকার।

চেনা মাঠের ঘাসে ছড়িয়ে থাকে শৈশবের ঘ্রাণ,
নিস্তরঙ্গ বাতাসে হাহাকার মেশে পরিযায়ী পাখির গান।
এখানে ছিল বসন্তের ফুল, আজ তারা মৃত,
তবু মনে পড়ে—জীবন তার উচ্ছ্বাসে ছুঁয়ে ছিল বৃন্ত।

ঝিনুকের মতো মেঘেরা আকাশের বুক চিরে,
স্বপ্নের সুরে বাজে রাত্রির অশান্ত নদীর ভাঙা তীরে।
কুয়াশা ঢাকা শস্যক্ষেত্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে,
ফুল ফোটার অপেক্ষা যেন ভুলে গেছে চৈতন্যের সময়ে।

ফিরে আসে কত দুঃখের কোলাহল—তবু নীরবতা,
বিচ্ছেদের বেদনায় জন্মায় এক নতুন গল্পের ভাষা।
এই প্রকৃতির বুকে রেখেছি প্রাচীন রূপের ছায়া,
বিষাদের প্রতিটি ছোঁয়ায় খুলে যায় জীবনের আভাস।

খর রোদ্দুরে যখন পৃথিবী জেগে ওঠে জ্বলতে,
মনে হয়, সেই প্রাচীন মেঘের গল্প আর নেই।
একদিন, নক্ষত্রেরা হারিয়ে যাবে এই শূন্যতায়,
শুধু থাকবে প্রকৃতির মৌন গাঁথা—নীরবতায়।

তবু আজও জেগে আছি, নিঃসঙ্গতার নীল গভীরতায়,
বিষন্নতার ছায়ায় ডুবে থেকেও খুঁজি আমি মুক্তি।
প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা প্রতিটি শৈশবের গান,
আজও কানে বাজে, হৃদয়ে রেখে যায় চিরন্তন বাণী।

বনভূমির ভেতর কোকিলের সুর, নির্বাক পাখিদের ডাকা, নদীর জলে গাছের ছায়া যেন হারিয়ে যাওয়া জীবনের ছবি। রোদে পোড়া মাঠে দাঁড়ায় না আর সেই স্বপ্নের মেঘ, তবু ধুলোর মধ্যে শোনা যায় জীবনের স্রোতের এক প্রবাহ।

দিনের শেষে সূর্য অস্ত যায় ধূসর মাঠের কোণে,
বেদনার ছন্দে মিশে যায় রাতের কালো আঁধারে।
এখানেই হয়তো থেমে থাকবে প্রকৃতির গল্প,
তবু মানুষের মন খুঁজে পাবে সান্ত্বনা—একদিন।