বসন্তের ঝরা পাতা আর হেমন্তের ধূলি গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছি শহরের মোড়ে।
এই শহর, যেখানে প্রতিটি ইট-কাঠ-পাথরের মাঝে লুকিয়ে থাকে এক অন্য রকম সঙ্গীত।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি,
কেউ ঝলমলে হাসির ভীড়ে অশ্রু মুছে নেয় আড়ালে, কেউ বা অন্ধকারে হাতড়ায় কোন এক আলোর সন্ধানে। এখানে পথে পথে বুনো ঘাসের দোল, কোলাহলের মধ্যে বাজে সংগীত বিনা।
প্রাণের এই শহরটাকে আমি ভালোবাসি,
যেমন ভালোবাসি পুরনো সেই কাঠের জানালাটাকে, যার শিকল ঝুলে পড়ে,
মনে করিয়ে দেয় কত কালের জমে থাকা স্মৃতি। জানালার ওপার থেকে শব্দ আসে—
হাঁসফাঁস, তবু বেঁচে থাকার গান গায়।
শহরের শেষ প্রান্তে, নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি,
বাতাসে উড়ে যায় মানুষের আশা,
ভেঙে পড়ে অগুনতি স্বপ্ন। তারপরেও কেউ গান গায়, কেউ হাত মেলে ধরে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে। আমার মনের মধ্যে ভর করে এক চাপা দীর্ঘশ্বাস,
যা কেউ জানে না, কেউ শোনে না।
অন্ধকারে আমি খুঁজি এক ফোঁটা আলো,
সেই আলো, যা রাতের আঁধারে ছিটকে পড়ে।
যেন জীবন নামক মহাকাব্যের অনুচ্ছেদগুলো টেনে নেয় তার অমোঘ ছন্দে। সময় তার বয়েসের গল্প বলে, মলিন হয়ে আসে হেঁটে চলার পথে।
তবুও হাঁটি আমি, কুড়িয়ে নিই ঝরে পড়া কথাগুলো শব্দেরা কখনো বিরহের, কখনো ভালোবাসার।
পথে পথে ছড়িয়ে থাকে সেইসব লুপ্ত প্রেম,
ভাঙা প্রতিশ্রুতি, আর অযুত আবেগের সোনালী স্মৃতি।
একসময়ে ভোর হয়। সূর্যের কিরণ জানিয়ে দেয়—হয়তো নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।
অথবা সেটা হতে পারে শুধুই এক অলীক স্বপ্ন,
যা কেবলই দূরের, অথবা অনন্তকালের।
আর তখনি, আমি বুঝতে পারি,
জীবন চলার ছন্দে স্থিরতা খোঁজা,
যেন এক দুঃসাধ্য খেলা। তবুও থামি না।
বয়ে যাই সময়ের স্রোতে, একাই, একলা অনন্তের পথে।