তুমি কি জানো ননাই
এখন আর আমার কোন কিছু ভালো লাগে না।
ঘর থেইকা বাইর হইতে পারি না
বাহির হলেই ওরা শুধু আমার শরিলডার দিকে তাকায় ।
জোয়ান বুড়া হগলে শকুনের মত তাকাইয়—
থাকে ফেল ফেল কইরা
আমি কি খাওনের পণ্য?
আমার দিকে বড় বড় চোখ কইরা
তাকাইয়া থাকে শুধু।
ওদের লালসার চোখ দেইখ্যা
বড্ড ভয় লাগে ননাই
মনে হয় আমারে জ্যান্ত খাইয়া হালাইবো।
বাপে রাইখা যাওয়া ভিটামাটি গুলান রে
সর্বনাশা নদীর ভাঙ্গনে লইয়া গেছে
আমারে চোখে দেখে নাই সর্বনাশা নদী
কেন যে আমারে রাইখা গেল এই নরপশুদের মাঝে। সহায় সম্বল বলতেই আমার এই শরিলডা— এই শরিলডা খাটাইয়া কাম কইরা খাই। রাতবিরাতে ঘরে হানা দেয় হিংস্র হায়নার মত।
ওরা শুধু দেহের সুখ খুঁজে—
কতদিন কত রাত না খাইয়া শুইয়া ছিলাম
ক্ষুধার জ্বালায় ঘুমাইতে পারি নাই
হেইডা দেখনের লাইগা কেউ তো আসে নাই।
কেন যে তুমি আমারে একা কইরা চইলা গেছো, কোনখানে যে চইলা গেছো বইলাও গেলা না । মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছা হয় ওই যে বাড়ির সামনে গাছটার সাথে গলায় দড়ি দিয়া জুইলা মরি, আবার ভাবি গলায় দড়ি— দিয়া মরণডা ভালা হইব না,
তাই আর মরতে পারি ননাই।
ভাবছি গ্রামে আর থাকুম না ডাহার শহর
যামু । হুনছি ডাহার শহরে বড় বড় দালান বাড়ি আছে ঐ খানে নাকি কাজের লোকের অনেক অভাব সেই হানে কাজ নিমু
আর যদি কোন কাজ না পাই প্রয়োজনে ভিক্ষা কইরা খামু—তবু এই অমানুষ গুলার লগে আর থাহুম না।
কাপড়-চোপড় গুলো গুছিয়ে ডাহার শহরে রওনা দিলাম অনেক কষ্ট কইরা বাসে উঠে বসলাম ভাড়া টাকাও নাই হাতে পায়ে ধইরা ডাহার শহরে আসলাম।
কোথায় যামু কোন জায়গায় জায়গা তো আমি চিনি না, অনেক খিদাও লাগছে কি খামু
দেখি হাত পাইতা কেউ কিছু সাহায্য করেনি
হাতপাইতে রাস্তার পাশে দাঁড়াইয়া থাকলাম দেখি একটা সাহেব আসতাছে।
সাহেব আমারে কয়টা টেকা দিবেন!
এই মেয়ে এত রাতে তুমি এখানে কেন
দাঁড়িয়ে আছো?
-ক্ষুধার জ্বালায় সাহেব ক্ষুধার জ্বালায়
সারাটা দিন চইলা গেল কয়টা ভাতের লাইগা পরানডা হটফট করতাছে
হাত পা কাপতাছে দেখেন সাহেব আমার হাতটা ধইরা দেখেন কেমনে কাপতাছে
দুই দিন ধইরা পেডে কিছু পড়ে নাই
দুইটা ভাতের লাইগা দাঁড়াইয়া আছি
যদি কোন সাহেব দুইটা টেহা দেয় তাইলে
কিছু কিনে খামু।
-দেখতে তো তোমাকে অনেক ভালোই দেখাচ্ছে,
তা তুমি কাজ করে খেতে পারো না?
-কাজ কইরা তো খাইবার ই চাই সাহেব
কাজ কিডা দিব আমগোরে
আর জাগো বাড়িতে কাজ করতে যাই
কয়ডা দিন যাইতে না যাইতে তারা আমার শরিলডার দিকে শকুনের লাহান তাকাইয়া থাকে, হ্যাঁগো চোখে দিকে তাকাইলে
আমার অনেক ভয় হয়,গরীব হইতে পারি বাবু
তাই বলে কি আমগো মান-সম্মান নাই-
আমরা তো শরীর বেইচা খাইতে পারুম না কাজ কইরা খাইবারি চাই —
হেগো জ্বালায় কাজ কইরা খাইতেও পারি না  
তাই রাস্তার ধারে দাঁড়াইয়া রইছি বাবু
সারাদিন পেটের মধ্যে কোন দানাপানি
পড়ে নাই, যদি কয়টা টেহা দিতেন তাইলে কিছু কিনা খাইতাম।
-তাই বলে কি এত রাতে
এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি ভয় হয় না!
-কি করমু সাহেব ক্ষুধার জ্বালা
এ জ্বালা এমনই একটা জ্বালা
বইলা বুঝাইতে পারুম না।
-চল তুই আমার সাথে তোরে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমি
-কোনহানে নিয়ে যাবেন সাহেব
আপনের বাসায়?
এই রাতে আপনের বাসায় আমি যামুনা
একজন কয়ডা ভাত খাওনের কথা কইয়া তার বাইত্তে নিয়া গেছে আমারে
তার ঘরের নিয়া জোর কইরা আমার শরিলডারে ভোগ করতে চাইছে
অনেক কষ্ট কইরা আমি সুইটা আইছি সাহেব
শরিলডারে রাহে নাই তার নখের আঁচড়ে শরিলডার অনেক জায়গায় ছুইলা গেছে
সেই কষ্টের কথা সাহেব আমি আর কাউরে কইতে পারি নাই।
বহুদিনের জমে থাকা কষ্ট সাহেব
বুহের ভিতরে লুকায়া রাখছি
মাঝেমধ্যে উকি ঝুঁকি দেয় চোখের কিনারায়
সেই দিনের কথা মনে হইলে
চোখের জল গুলান এমনি এমনি ঝইরা পড়ে। আমারে আবার ভয় দেখায়
বলে কিনা জন্মের সাধ মিটাইয়া দিমু তোর
যে কিনা জন্ম থেকেই পুড়তে আছে
তাকে আবার পুড়ার ভয় দেখায় কিলাভ বলেন সাহেব।
-ওর কথা শুনে খুব খারাপ লাগছিল
তুই কি যাবি আমার সাথে! যদি বিশ্বাস করিস, আমার ওখানে নিরাপদেই থাকবি
এতোটুকো বলতে পারি—
একটা ছোট খাটো কাজও দিবো তোকে
আমার একটা ফুলের বাগান আছে
সবুজ ঘাসের উপরে শিশির জমে থাকে
নানান রঙের ফুল ফুটে থাকে তুই সেই বাগানটা দেখবি দেখাশোনা করবি
চল আমার সাথে।
-না সাহেব আন্নের সাথে এখন আর যামুনা
এখন আর নিয়ারে ভিজা ঘাসের উপরে দিয়া হাঁটতে ইচ্ছে হয় না
বিহান বেলায় ফুল কুড়াবার ইচ্ছে করেনা
আমার ইচ্ছা গুলা সব মরে গেছে।
যদি পারেন কয়টা টেহা দেন অনেক ক্ষুধা লাগছে কয়টা ভাত খামু।
-ঠিক আছে চল তোকে আগে ভাত খাওয়াই তারপরে না হয় তুই আমার সাথে যাবি
আমার সাথে তুই নির্ভয়ে যেতে পারিস আমি তো তোর বাবার মতই
আমার কেউ নাই দুই কূলে
তুই যদি থাকিস তাহলে আমার ভালোই লাগবে।
-বাবুর এই কথাগুলো শুইনা আমার মনটা ভইরা গেছে আমি আর না করতে পারলাম না
ঠিক আছে সাহেব চলেন ।
সামনেই একটা হোটেল আছে ওইহানে যাই
-সাহেব ঝুড়ির ভিতরে লাল কাপড় দিয়া ঢাইকা রাহে কাপড়ডা সরাইলে গরম ধোয়া উঠে কি যে ভালো লাগে দেইখা এই পেটটা এমনিতেই ভইরা যায় খাইতে আর পারিনা
কেডায় দিবো আমারে খাওন....
-ঠিক আছ চল আগে তোমার খাবারের ব্যবস্থা করি
-ঠিক আছে সাহেব চলেন
-খাবারের হোটেলে ঢুকতে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখগুলো জ্বল জ্বল করছে  পুরো মুখটাই যেন আলোকিত হয়ে গেছে ,খুব মায়া হল—
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম
ওয়েটারকে দৌড়ে আসলো টেবিলের সামনে তোমাদের এখানে ভালো ভালো যে খাবার গুলো আছে সেইগুলো টেবিলের উপরে এনে রাখো, কথামতো সব ভালো খাবার গুলো এনে রাখতে শুরু করল ওয়েটারক
তোর যেগুলো খাবার ভালো লাগে
সেগুলো তুমি খেতে পারো ।
-সাহেব এত খাবার আমি জীবনেও দেখি নাই এগুলো কি সব আমার জন্য
-হা তোর জন্য তোর যেগুলো ভালো লাগে তুই খেতে পারবি কোন সমস্যা নেই
-ঠিক আছে সাহেব
-আমিও তোর সাথে রাতের খাবারটা খেয়ে নেই।
-সাহেব আপনার বাসায় কেউ নাই?
-না আমার বাসায় কেউ নেইরে শুধু আমি
থাকি—ছেলে মেয়েরা সবাই আমেরিকাতে থাকে।
-আপনার রাধন বারণ কাপড়-চোপড় ধোঁয়া কেডায় কইরা !
-এগুলো সব আমি নিজেই করি
-ও আচ্ছা আপনার অনেক কষ্ট হয় তাই না সাহেব!
-কষ্ট আসলে কি জানি না তবে মানুষের জীবনে অনেক ধরনের কষ্টই থাকে
কেউ বলতে পারে কেউ বলতে পারেনা আমি হয়তো বলতে পারি না তাই চুপচাপ থাকি।
-সাহেব গরুর মাংসডা আমি খামু
-বললাম তো এখানে যতগুলো খাবার আছে তোর ভালো লাগলে সবগুলোই তুই খেতে পারিস তাড়াহুড়োর দরকার নাই
আর কোন চিন্তা করারও প্রয়োজন নেই আমি সব টাকা দিয়ে দিব তুই খেয়ে নে।
-সাহেবের কথাগুলান শুইনা
পরানডা ভইরা গেল- খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চল আমার সাথে আমার বাসায়
দেখি তোর জন্য আমি কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারি কিনা তবে তুই আমার ওখানে নিরাপদেই থাকবি আমার মেয়ের মতোই থাকবে।
-সাহেবের কথাগুলো শুনে চোখে পানি আইসা গেল।
-চল আমরা এখন উঠি আর চিন্তা করিস না জীবনে কখন কাকে প্রয়োজন হয় সেটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন
হয়তো আমাকে তোর প্রয়োজন আছে
সে কারণেই হয়তো আল্লাহ তায়ালা
তোর সাথে আমার দেখা করিয়ে দিয়েছে শুকরিয়া জানাচ্ছি আল্লাহর দরবারে।
হোটেল থেকে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো
কিছুক্ষণের মধ্যে একটি রিকশা এসে দাঁড়ানো সামনে , তুমি কি যাবে?
-জি স্যার যামু উইঠ্যা বসেন
কোথায় যাইবেন স্যার !
-টিকাটুলি বলদা গার্ডেনের পাশেই আমার বাড়ি।
-ঠিক আছে স্যার।
-মেয়েটিকে নিয়ে রিকশায় উঠে বসলাম
মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক মায়া হতে লাগলো বারবার আমার মেয়েটির কথাই মনে পড়ছে জানিনা ওরা কেমন আছে কতদিন ওদের সাথে কথা হয়না
চোখের দেখাটাও দেখতে পারিনা
কেমন যেন একটা হাহাকার বুকের ভিতর
সব সময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়.......




ভালো লাগলে চলবে........