একদিন, এক গভীর কুয়াশার রাতে,
হেঁটে যাচ্ছিলাম নিঃশব্দে, একা।
আকাশে চাঁদ ছিল, কিন্তু যেন লুকিয়েছিল
ধোঁয়াশার মোটা চাদরের তলায়।

চারপাশ থমথমে, এক অদ্ভুত শূন্যতা,
আর আমি, গন্তব্যহীন পথিক,
পা ফেলছিলাম মন্থর, অন্যমনস্ক।
কিন্তু হঠাৎই থমকে দাঁড়ালাম।

মনে হলো, আমার পেছনে কারো পায়ের শব্দ,
নীরব রাতের ভেতর অশরীরী সুর।
ভয় যেন তুষারের মতো জমে গেল বুকে,
পা দু’টি অচল, কেবল শীতল শিরশিরানি।

আরও একবার শব্দ পেলাম,
এবার যেন আরও কাছে, স্পষ্ট।
আমার নিঃশ্বাস আটকে গেল,
তবু পেছনে তাকাবার সাহস পেলাম না।

গাছের ডালে কুয়াশা ঝুলছিল ভারি,
আর আমি হাঁটছিলাম যেন অদৃশ্য শিকলে বাঁধা।
পা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করছিলাম,
কেউ যেন আমায় অনুসরণ করছে।

হঠাৎ বাতাসে ভেসে এল এক চাপা ফিসফিসানি।
কথা নয়, যেন অদ্ভুত সুর।
আমার কানপট্টি দিয়ে গড়িয়ে পড়ল সে আওয়াজ,
আর হৃৎপিণ্ড যেন বেজে উঠল আতঙ্কের তাল।

পা বাড়াতে চাইলাম দ্রুত,
কিন্তু রাস্তা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।
কুয়াশা এক ছায়ার মতো ঘিরে ধরেছে আমায়,
আর পেছনের শব্দ ক্রমশ তীব্র।

পেছনে কি সত্যিই কেউ ছিল?
নাকি কুয়াশার ভেতর লুকিয়ে থাকা ছায়ামাত্র?
নিজের ছায়াটাও আজ অচেনা লাগছিল,
লম্বা, বিকৃত, অন্য রকম।

পথের মোড়ে একটা গাছ ছিল,
তার শাখাগুলো যেন মুঠো পাকিয়ে ডাকছিল আমায়।
শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল,
তবুও দৌড়ে পালানোর সাহস হলো না।

আমি হাঁটছিলাম, যেন সেই ছায়ার খেলার অংশ।
পেছনে ফিরতে গিয়েও বারবার থেমে গেছি।
সামনে এক অসীম পথ,
পেছনে অচেনা উপস্থিতি।

যখন অবশেষে বাড়ি পৌঁছলাম,
দরজা বন্ধ করলাম শক্ত করে।
তবুও মনে হলো, কেউ দাঁড়িয়ে আছে
ঠিক বাইরে, আমার নিশ্বাসের শব্দ শুনছে।

ঘুম এলো না সেদিন,
চোখ বন্ধ করলেই সেই ছায়া, সেই শব্দ।
কুয়াশার ভেতর লুকিয়ে থাকা অচেনা মুখ,
আমার ভয়কে হাতড়ে বেড়াচ্ছিল যেন।

আজও সেই রাত মনে পড়ে,
সেই নিঃসঙ্গ কুয়াশার পথ।
জানি না, সেই ছায়াটা বাস্তব ছিল,
নাকি আমার মনেরই সৃষ্টি।

তবু, রাত হলেই মনে হয়,
আমার পেছনে কেউ হাঁটছে,
আমার নিঃশ্বাসের সাথে মিশে যাচ্ছে
তার শীতল অস্তিত্ব।
ভয়? না কি আকর্ষণ? জানি না,
কুয়াশার সেই রাত আজও আমায় ডাকে।