কবিতা মরে গেছে,
কবিতাকে হত্যা করা হয়েছে,
কেউ বলছে, কবিতা আত্মহত্যা করেছে,
কেউ বলছে, কবিতাকে গলা টিপে মারা হয়েছে,
কেউ বলছে, কবিতার শিরায় ঢেলে দেওয়া হয়েছে বিষ,
আর কেউ বলছে, কবিতার হৃদয়ে চালানো হয়েছে ছুরি।
এখন কবিতার নিথর শরীর পড়ে আছে,
পোস্টমর্টেম টেবিলে,
ডাক্তাররা ছুরি চালাচ্ছেন,
খোলা হচ্ছে একটু একটু করে শব্দের চামড়া,
ছেঁড়া হচ্ছে ছন্দের শিরা-উপশিরা,
প্রতিটি উপমা ছুঁয়ে দেখা হচ্ছে সতর্ক হাতে,
রূপকের রক্তাক্ত দেহ থেকে নেওয়া হচ্ছে নমুনা।
ডাক্তার বলছেন,
কবিতার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়,
শব্দগুলোর গলায় ছিল দাগ,
ছন্দগুলো শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেছে,
উপমারা নীল হয়ে পড়েছিল,
আর রূপকের বুকে ছিল ক্ষতচিহ্ন।
পুলিশ বলছে,
কবিতাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল এক নিঃসঙ্গ
কবির হাতে,
তার চোখ ছিল অন্ধকারে ডুবে যাওয়া নদীর মতো,
তার ঠোঁটে ছিল ফ্যাকাশে এক দীর্ঘশ্বাসের হাঁসি।
তার হাতে ছিল কলম,
কিন্তু কালি ছিল না।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
কবিতা মরেছে ধীরে ধীরে—
প্রথমে ছন্দ গেছে,
তারপর উপমা,
তারপর রূপক,
তারপর বাক্য,
তারপর কবিতার আত্মা,
শেষে পড়ে ছিল শুধু শিরদাঁড়াহীন কিছু শব্দ।
প্রকাশকরা বলছেন,
কবিতার মৃত্যুতে দুঃখ নেই,
পাঠকের অভাবে কবিতার মরারই কথা ছিল,
পত্রিকার পাতায় কবিতার জায়গা নেই,
বইয়ের দোকানে কবিতার কদর নেই,
সামাজিক মাধ্যমে কবিতার মূল্য নেই।
অভিযোগ উঠেছে—
সমাজ কবিতাকে হত্যা করেছে,
পুঁজিবাদীরা কবিতাকে হত্যা করেছে,
সেলিব্রিটিরা কবিতাকে হত্যা করেছে,
মাঝরাতে ফেসবুকের পোস্ট শেয়ার করা মানুষ কবিতাকে হত্যা করেছে।
কবিরাও সন্দেহের বাইরে নয়—
কিছু কবি কবিতার ঘাড় মটকে দিয়েছে,
কিছু কবি ছন্দকে শ্বাসরুদ্ধ করেছে,
কিছু কবি উপমাকে ধর্ষণ করেছে,
কিছু কবি কবিতার শরীরে বিজ্ঞাপন সেঁটে দিয়েছে।
তবে কি কবিতা সত্যিই মরে গেছে?
কেউ বলছে, কবিতা এখনো বেঁচে আছে,
কেউ বলছে, কবিতা এখনো লুকিয়ে আছে কোনো প্রেমিকার চিরকুটে,
কেউ বলছে, কবিতা এখনো নিঃশব্দে কাঁদছে,
কেউ বলছে, কবিতা এখনো এক অনামি কবির ডায়েরিতে ঘুমিয়ে আছে।
তবু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে—
কবিতা মৃত, কবিতা শেষ।
এখন কেবল কবিতার কবর খোঁড়ার অপেক্ষায় আছে।