পৃথিবীর পথে যে ছায়া লেগে থাকে,
সেই ছায়া কোনো দিন রোদ্দুরের প্রতিপক্ষ নয়।
ঘাসফড়িঙের ডানায় গোধূলির মেঘ জমে,
তারপর অন্ধকারে ডেকে ওঠে একলা বটগাছ।
তোমার চোখে ধরা পড়েছে শালিকের উড়াল,
আমার হৃদয়ে ঝরে পড়ে করবীর লাল কুঁড়ি।
নদীর ধারে ঝুঁকে থাকে নাম-না-জানা কত গাছ,
তাদের পাতায় পাতায় লেখা কবিতার গান।
অলস দুপুরে হাওয়ার গান শুনে,
মনে হয় এই শহরেও অরণ্যের গন্ধ লেগে আছে।
দেয়ালের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় অচেনা ফুল,
তাদের ঘ্রাণে মিশে থাকে ভাষাহীন ইতিহাস।
জীবনানন্দের পথে আমি হাঁটি প্রতিদিন,
যেখানে সময় থমকে দাঁড়ায় সন্ধ্যার মুখে।
তোমারও কি মনে হয়, কবিতা রয়ে গেছে
জীবনের প্রতিটি বাঁকে—নিঃশব্দ, তবুও জীবন্ত?
জীবনের প্রতিটি বাঁকে কবিতা যে জেগে থাকে,
তাকে ছুঁতে গেলে লাগে একলা পথিকের মন।
নক্ষত্রের ঝরাপাতায় ঝুলে থাকে কথারা,
যা কেউ শোনেনি, তবু শোনা যায় চাঁদের আলোয়।
তোমার চৈতন্যে কি বাজে সেই পুরনো সুর—
যা বয়ে এনেছিল পলাশের আগুন?
বাতাসে মিলিয়ে যায়, তবু রেখে যায় চিহ্ন,
জীবনের রক্তিম এক চিরন্তন স্বাক্ষর।
তুমি যখন কুয়াশার আড়ালে হারিয়ে যাও,
তখনো কবিতা খোঁজে তোমার নামের ছায়া।
যেন আকাশ জানে, মাটির গোপন মর্ম,
আর নদী বহন করে সময়ের গভীর আহ্বান।
তবু শেষ হয় না সেই পথের শেষ গল্প,
কারণ কবিতারা তো বেঁচে থাকে নীরবতাতেও।
তাদের আলো ছুঁয়ে যায় চৈত্রের ফাটা জমি,
যেখান থেকে জন্ম নেয় বসন্তের নতুন গান।
হয়তো সেটাই হবে জীবনের একমাত্র উত্তর,
যেখানে সময়ের বুকে রবে শব্দের চিরকালীন চিহ্ন।
তোমার চোখের জলে একদিন গড়াবে ভাষা,
আর সেই ভাষাতেই লিখবো আমার শেষের কবিতা।