রাত্রি গভীর হতে থাকে,
নক্ষত্রেরা যেন দূরের প্রদীপ হয়ে জ্বলে মিটমিটে করে আলো ছড়াতে থাকে।
পুরন স্মৃতির পথে একা একা হেঁটে যাই,
বকুলতলার ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকে নিরবতার এক অচেনা ছায়া।
দূর থেকে ভেসে আসে কেমন যেন করুন কান্নার সুর—
পুরোনো কোনো রাতের বেদনা নিয়ে,
অথচ আমার কাছে হয়ে ওঠে
আরেক চাঁদের মায়াবী আলোর প্রদীপ।

সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখ মেলে দেখি,
বেলাগাম ধুলো আর শুকনো পাতা মাড়িয়ে
বন-জোনাকিদের মিষ্টি নাচন।
অচেনা ফুলের ঘ্রাণে ভরা বাতাসে হারিয়ে যাই ক্রমশ।
যাকে একদিন ভালোবেসেছিলাম,
সে এখন নিঃসঙ্গ নদীর ওপারে বসে থাকে,
নদীর ভাঙা ঢেউয়ে আমার নাম লিখে রাখে।
আর আমি তবুও নক্ষত্রমণ্ডলের গভীরে
খুঁজে ফিরি সেই আলোচিত দিনের স্মৃতি।

পাহাড়ের ঢালে ফুটে আছে লাল টুকটুকে ফুল,
তার রঙে মিশে থাকে জীবনের অপূর্ণ গল্প।
পাখিরা একে একে ফিরে যায় বাসায়,
বনবিথির কান্নার শব্দ ভেসে আসে দূর থেকে,
ঝিঁঝি পোকার ডাকের মাঝে, হঠাৎ মনে পড়ে যায়
সাপলুডো খেলার সেই পুরোনো রাতের স্মৃতি,
পায়ের নিচে অনুভব করি মৃত্তিকার শীতল নিঃশ্বাস।

এই পৃথিবীর প্রতিটি কণায় লেখা থাকে
স্মৃতির কোনো এক দীর্ঘ গল্প।
মনে হয়, কেউ চলে গেলে,
তার পদধ্বনির ছায়া থেকে যায়
ঝরা পাতা আর মাটির আলিঙ্গনে।
আমার বুকের গভীরে সেই ছায়া—
কাঁদে না এমন এক নদীর স্রোতে ভাসে চোখ মেলে দেখি নিরবে আর ভাবতে থাকি।

পাহাড়ের ওপারে চাঁদ ওঠে,
দূর বনানীতে ঝাউয়ের ঝুমকার সুর শোনা যায়,
ভাবি, হয়তো একদিন সেই মায়ার ছোঁয়া পাবো।
একদিন এই জেগে থাকা রাতটা আমার হবে।
কিন্তু হঠাৎ বাতাস এসে কানে ফিসফিস করে বলে—
"তুমি তো এখনো পথের ধুলোতে পড়ে আছো,
অন্ধকার তোমাকে আড়াল করে রাখবে।"

তবুও, ভাঙা স্বপ্নের অনুভূতি মিশে থাকে বাতাসে।
পরিত্যক্ত পথে আমি হাঁটি—
এক অনন্তকালের গন্তব্যের পথের খোঁজে।।