নীল জলের ভেতর ডুব দিয়ে উঠে আসা,
সন্ধ্যার মতো অনন্তকাল প্রতিজ্ঞা শেষে ফিরে এসেছে,
সীমাহীন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকি—
এই শহর, এই নদী,
যেখানে বাতাস শুঁকছে পুরনো ধোঁয়া আর হারানো দিনের নোনতা গন্ধ।
আমার জীবন যেন এক অদ্ভুত শীতল পথ—
ধুলোর কুয়াশায় ঢাকা,
শীতল পাথরের মতো সে বয়ে চলে,
ফেলে আসে ঝরা পাতার ছায়া, ভুলে যাওয়া রোদের উষ্ণতা।
গাছের পাতায় যেন বাতাসের নুপুর বাজে,
আমি শুনতে পাই,
দূরের মেঘের ডাকে সাড়া দেয় আমার নীরবতা।
আমার চারপাশে এক অদৃশ্য দহন—
কিন্তু আমি জানি না তার নাম,
শুধু দেখি তার ছায়া, দেখি তার পরিধি,
সেই ছায়ার নিচে আমি হাঁটি, ঝরা পাতার মতো ভেসে যাই স্রোতের কোল ধরে।
বৃক্ষের নিঃশব্দে নুয়ে পড়া,
পাহাড়ের মাথায় বসে থাকা সন্ধ্যার বিষণ্ণতা—
তাদের ভাষা আমি বুঝি, তাদের আক্ষেপ আমার মতোই নীরব।
বুকের ভেতর শুধুই হাহাকার, নক্ষত্রেরা যেন আমার চোখের পলক ফেলার সাথে সাথে নিভে যায়।
এই মাঠ, এই আকাশ, এই নদী—
এরা সবাই আমার চেনা,
তবুও আমি পর হয়ে যাই; দূর থেকে দেখি,
স্পর্শ করি না,
আমার হাত যেন বাঁধা কোনো অলৌকিক জালে,
আর আমার মনে ছড়িয়ে পড়ে এক ভূমন্ড অভিমান,
যার কোনো শেষ নেই, কোনো কারণ নেই—
শুধু আছে এক নিঃসঙ্গ দীর্ঘশ্বাস।
আমি হেঁটে যাই বিস্মৃতির পথ ধরে,
আমার পায়ের নিচে মাটি—
ক্রমশ ঢেউয়ের মতো ভেঙে যায়,
আমি ভেসে যাই স্রোতের উজানে,
তবুও জানি না কোথায় চলেছি আমি,
এই পথের শেষ নেই, এ এক নিরন্তর ঘূর্ণি,
যেখানে সবকিছু মিশে যায়— দিনরাত্রি, আলো, অন্ধকার।
ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখি ছায়া আর রৌদ্রের খেলা,
পাহাড়ি নদীর শীতল জলে একা দাঁড়িয়ে আছি আমি,
আর আমার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে বিশাল আকাশ— তার নিচে ঝরে পড়ছে ছায়া, আর বয়ে চলে যাচ্ছে সময়ের নদী।
কখনো কখনো আমি প্যাঁচার ডাকে জেগে উঠি—
কখনো আবার হারিয়ে যাই যেন এক গভীর ঘুমের ভেতর, যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবতা মিলেমিশে যায়,
তাদের মাঝে ফাঁক নেই, শুধু আছে এক অদ্ভুত সুর,
যা হয়তো কেউ শুনতে পায় না, শুধু আমিই শুনি।
এই শহর, এই নদী, এই সময়—
সব কিছু যেন এক মায়াবী ঘোরের ভেতর ডুবে থাকে,
আমার জীবন তার ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যায়—
শুধু থেকে যায় বাতাসে ভেসে থাকা স্মৃতির স্পর্শ,
আর আমি তাদের সাথে ভেসে যাই, নিঃশব্দে,
নিরবে মহাকালের পথ ধরে।।