একদিন নীরবতা নামে—
ধূসর ধানের শীষে, ঘাসের ডগায়
কিছু সাদা কুয়াশা, কিছু মলিন আলো—
কালবেলার বুকে;
নদীর বালুচরে ভাঙা শঙ্খের মতো পড়ে থাকে স্মৃতির কথারা,
ছায়ার মতন আসে দূর থেকে কাকে যেন খুঁজতে,
মনে হয়—কোনো একদিন এই পথেই হেঁটে গিয়েছে
কোনো এক সুপ্ত আগুনের মেয়ে,
যার চুলে ছিল নিভে যাওয়া গোধূলির নরম আলো।

বাতাসে শিষের মতো বাজে— দূর মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি,
যেন দূরবর্তী কোনো পাখি ডাকে, অচেনা বনে,
দূরের গাছের ডাল ভেঙে পড়ে কোথাও—
অচেনা বাগানে অথবা কারও অলক্ষ্যে।

নীরবতার বুক ছিঁড়ে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে আকাশ,
হাওয়ার ঠোঁটে জমে থাকে ভেজা ভেজা দুঃখ—
আলোর পথ ছেড়ে ছুটে আসে সব ছায়া,
এই পথ ধরে একদিন গিয়েছিলাম—
তখনও সন্ধ্যা ছিল, কেউ কি কাঁদছিল?
যেন এইখানে কোনো চেনা মুখ হারিয়ে গিয়েছিল কুয়াশার ভেতরে, শুকনো ঘাসের গন্ধে মেখে।

জলের মধ্যে ডুবে থাকা চাঁদের আলো যেন বলে—
ফিরে যেও না; এই পথ বুনো শালের,
অন্ধকার মেঘের, আর মাকড়সার জালের।
তবুও, শূন্যতায় যেন একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল—
পথ হারানোর, হারিয়ে যাওয়ার।

ফিরে এসে দেখি সব কিছু একই,
নদীর বুক ভাঙে, পাহাড় ঢেকে যায় মেঘের ছায়ায়,
এই গোধূলির নরম শরীর মুছে যায় পলকেই—
শুধু স্মৃতিরা পড়ে থাকে শালুক ফুলের মতন—
ছড়িয়ে পড়ে জলের গভীরে,
গ্রামের নিস্তব্ধ রাস্তায়, কারও একা হেঁটে যাওয়া পথে।

এই নদীর পাড়ে, কত রাতের নিস্তব্ধতা এসে জমা হয়,
কেউ জানে না—
কারো কণ্ঠে একদিন এই জলপ্রপাত হবে গানের সুর,
আকাশে হারিয়ে যাবে তারাগুলোর মতো, একা একা—
অন্ধকার গাছেরা দোল খেতে খেতে স্মৃতির পথ ধরে
তোমার ছায়া ফিরিয়ে আনে।

ফেরার পথে ধূসর মেঘ জমে,
সন্ধ্যার নির্জনতা ভাঙে না।
শুধু বাতাসে ভাসে পুরনো দিনের দুঃখ,
বাঁশবনে ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া অচেনা নদীর স্রোত—
মনে হয়—হারিয়ে যাব এই তমসায় একদিন,
মনে হয়—তবুও ফিরে আসবো এই নদীর তীরে,
হয়তো সব জ্যোৎস্না ফুরিয়ে গেলে।