এই শহর আর আমি, যেন দুজন সহযাত্রী,
পথের ধারে জমে থাকা ধুলোর গন্ধে গাঁথা শৈশবের স্মৃতি।
গলির দেয়ালে আঁকা অসংখ্য গল্প,
চায়ের দোকানের ভাঙা বেঞ্চে বসে ভেসে ওঠে বন্ধুত্বের কবিতা।
ধোঁয়া ওঠা চায়ের ভাঁড়ে জ্বলে ওঠে জীবনের উষ্ণতা,
আর সিগারেটের শেষ সুখটানে মিশে থাকে তিক্ততার ছায়া।

রিকশার কাঁপুনিতে গান বাঁধা সেই দুপুরগুলো,
হলুদ আলোর ভিজে সন্ধ্যায় পথের নিঃসঙ্গতা।
এই শহর কি শুধুই ইট-কাঠের সমষ্টি?
না, তার শরীরে মিশে থাকে মানুষের দীর্ঘশ্বাস,
আলোছায়ার খেলা, আর অব্যক্ত ব্যথার প্রতিধ্বনি।
প্রতিটি মোড়ের বাঁকে জমে থাকা গল্পগুলো
তখনও বলছে আমাদের কথা—কখনো চেনা, কখনো অচেনা।

একটা চায়ের দোকান, একটা ভাঙা বেঞ্চ,
ফুটপাথে পড়ে থাকা পুরনো চিহ্ন,
এসবের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আমার পরিচয়।
এই শহর আমায় বলত—তুমি বেঁচে আছো।

এই শহর ঘুমায় না।
রাতের গভীরতায়ও তার শিরায় বয়ে চলে যান্ত্রিক শব্দের প্রবাহ।
অফিস ফেরত ক্লান্ত মানুষের নিঃশ্বাস মিশে থাকে বাতাসে,
রাস্তার ধারে চাটাই পেতে বসা দোকানির চোখে খেলে যায় নতুন স্বপ্ন।
এই শহরকে শিকল পরানোর চেষ্টা বহুবার হয়েছে,
তবু সে থেমে থাকেনি, ভেঙে ফেলেছে সব বাধা,
নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছে।

আজ যখন আনমনে দাঁড়িয়ে থাকি,
দেখি, হারিয়ে গেছে কত কিছু।
বন্ধুরা ছড়িয়ে পড়েছে দূর অজানায়,
চায়ের দোকান বদলে গেছে ঝকঝকে রেস্তোরাঁয়।
রাস্তাগুলো চকচকে হয়েছে,
তবু কোথায় যেন মিস করি সেই ধুলো, সেই ধোঁয়া,
সেই ভাঙা বেঞ্চের স্পর্শ।

তবু জানি,
এই শহর বেঁচে থাকবে—
আমাদের গল্পে, স্মৃতির মায়াবী বিভায়।
যখন একলা সন্ধ্যায় হাঁটি,
মনে হয়, শহরটাও যেন আমায় খুঁজছে।
আমাদের আড্ডার শব্দ, আমাদের হাসির ঝিলিক,
যা ছড়িয়ে ছিল তার প্রতিটি ইটের ভাঁজে।

এই শহর আর আমি,
একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি,
আর একসঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছি
ধোঁয়া, ধুলো, আর স্মৃতির মায়াবী আলোছায়ায়।