কতবার তোকে খুঁজতে গিয়েছি,
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে,
সেই কাঁচা রাস্তার ধুলোমাখা সন্ধ্যায়—
তোর কণ্ঠ যেন মিশে থাকে বাউলের সুরে,
আর ভেজা শালের পাতার ফাঁকে চুপচাপ বসে থাকে তোর ছায়া।
তুই কি জানিস, আমি কতবার থেমেছি কেবল তোর নামে,
দেখেছি পাখিদের উড়ে যাওয়া,
দেখেছি মাটির পথ ফুরিয়ে যেতে যেতে শেষ হয়ে গেছে দিগন্তের মায়ায়।

কখনো কখনো তোকে খুঁজতে গিয়েছি জীবনানন্দের ধানসিঁড়ির নদীর তীরে,
যেখানে সোনালি ধানের সুবাস মাখা বাতাস,
আর পায়ের নিচে কাদার চিহ্ন রেখে যায় কোনো অলস দুপুর।
তুই কি ছিলি ওই নদীর কোনো ঢেউয়ে?
নাকি ছিলি মেঘলা আকাশে ভাসমান একটি সাদা পালকের মতো?
আমি থেমে গেছি প্রতিটি মোহনায়,
তাকিয়েছি চাঁদ আর মাটির মাঝখানে জমে থাকা জলাধারে।
কিন্তু তুই ছিলি না, তুই ছিলি কেবল স্মৃতির কোনো ভাঙা ক্যানভাসে।

আমি তোর জন্য হেঁটেছি শহরের ভাঙা ফুটপাত,
বৃষ্টির পরে জলে ভরা গলিপথ,
জানিস, কোথাও তোর নাম খুঁজে পাইনি,
কিন্তু পেয়েছি তোর অভাবের সুর।
পেয়েছি নিশ্বাসে মিশে থাকা দীর্ঘশ্বাস,
পেয়েছি অন্ধকার রাতের শেষ প্রহরে ভেসে আসা তোর মৃদু ছায়া।

তুই ছিলি আমার আকাশের চাঁদ,
যাকে ছুঁতে গেলে আঙুলে লেগে থাকে কেবলই শূন্যতা।
তুই ছিলি বাতাসের মতো—
অদৃশ্য, অথচ সবসময় কাছে।
তুই কি জানিস, আমি কাঁদতে শিখেছি তোকে খুঁজতে গিয়ে?
আমি শিখেছি নিঃশব্দ কান্নার ছন্দ,
আমি শিখেছি পথচলার মাঝে বিরতি নিতে।

কতবার তোকে খুঁজতে গিয়েছি আমি,
বাউল গানের সুরে, কোকিলের কণ্ঠে,
পাহাড়ের চূড়ায় ভাঙা ঘাসের গন্ধে।
তুই কি কোনোদিন ফিরবি?
নাকি চিরকাল থেকে যাবি আমার স্মৃতির কোনো অপূর্ণ বাক্যে?
তোর অভাবই হয়তো আমার জীবনের একমাত্র পূর্ণতা।
তুই ছিলি, তুই নেই—
এই অদ্ভুত দ্বন্দ্বেই বেঁচে থাকি,
আর প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, তোর জন্য আমার পথচলা।