ভুলে যেতে চেয়েছি তাকে,
তবু তার ছায়া রয়ে গেছে অমলিন—
হৃদয়ের মাঝে।
যেন প্রাচীন কোনও পাণ্ডুলিপি,
যা সময়ের অন্তরালে ঢাকলেও মুছে যায় না।
অরণ্যের সবুজ পাতার মাঝে
লুকিয়ে থাকা অজানা কোনও স্মৃতির মত,
যেখানে রোদ এসে থেমে যায় নিরবে,
আর বাতাস কেবল তার নাম ধরে ডাকে।

তার চোখের গভীরতা আজও টেনে নিয়ে যায়
নিঃশব্দে সন্ধ্যার অন্ধকারে।
ভুলে যেতে চেয়েছি,
তবু প্রতিটি নক্ষত্রে তার মুখের রেখা
জেগে ওঠে ধূসর শীতের সকালের মত—
অস্পষ্ট, অথচ হৃদয় বিদীর্ণ করা।
তার কণ্ঠস্বর এখনও বাতাসের মাধুর্যে মিশে থাকে,
কখনো গান হয়ে, কখনো দীর্ঘশ্বাসে।

গোধূলির রক্তিম আলোয় যখন পথ মিশে যায় ধোঁয়ায়,
তখন তার পায়ের শব্দ শুনি—
দূরের কোনো ধূলিমাখা পথ থেকে।
তার অস্তিত্ব যেন নদীর ঢেউ,
যা ফিরে আসে বারংবার,
প্রতিটি জোয়ারে, প্রতিটি ভাটায়।

আমি ভুলতে চেয়েছি তার সব স্মৃতিগুলো,
তবু শূন্যতার প্রতিধ্বনি তাকে ফের এনে দেয়।
ধানের মৃদু সুবাসে লুকিয়ে থাকে তার হাসি,
আর হেমন্তের বাতাসে ভেসে আসে তার দীর্ঘশ্বাস।
যে মাটি একদিন তার পায়ের নিচে শীতল হয়েছিল,
সেই মাটি এখনও তার ছোঁয়া বয়ে বেড়ায়।

আমি মুছে ফেলতে চেয়েছি হৃদয়ের গহীন থেকে
তার প্রতিটি স্মৃতি,
তবু প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি রঙ
আমাকে তার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
যেন প্রাচীন কোনও মন্ত্র,
যা শোনার পরও ভোলার নয়।

তার উপস্থিতি এক অদ্ভুত মায়া,
যা ছিঁড়ে ফেলতে গেলে
আরও বেশি জড়িয়ে ধরে।
তার হাসি, তার কান্না—
সবই যেন পাহাড়ি ঝর্ণার সুর,
যা থেমেও গুনগুন করে বাজে।

ভুলতে চেয়েছি তাকে,
তবু তার ছায়া প্রতিটি নিঃশ্বাসে আঁকা।
যেন শুকনো পাতার মৃদু শব্দ,
যা কানে না এলেও মনে বেজে ওঠে।
তার স্পর্শের স্মৃতি এখনও
শরীর আর মনে জ্বালিয়ে রাখে
অগোছালো মেঘের আড়াল থেকে ঝরে পড়া রোদ্দুরের মত।

তার মুখের ছাপ আজও রয়ে গেছে
গাছের পাতায়, পাখির ডানায়।
তাকে ভুলতে চেয়েছি—
তবু তার ছায়া যেন শিকড় হয়ে ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়ের গভীরে।
যখনই মুছে ফেলতে চাই তার নাম,
তখন প্রতিটি সন্ধ্যা
তার মৃদু ছায়া এনে দাঁড় করায় আমার পাশে।

আমি চেয়েছি তাকে ভুলে যেতে,
তবু সে রয়ে গেছে—
কালো মেঘের নিচে হারানো সূর্যের মত,
অদৃশ্য, অথচ সর্বত্র।