এই শহর বহুদিন ধরে বৃষ্টি দেখেনি। পাতার ওপর জমে থাকা ধুলোগুলো যেন ক্লান্ত, মানুষগুলোও হাঁটছে মাটি খুঁজে খুঁজে, যেন মাটিই তাদের শেষ আশ্রয়। আমি হয়তো বৃষ্টির কণায় মিশে যেতে পারতাম, যদি এ শহরের মাটি আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাস করত। তবুও, আমি বৃষ্টি হতে চেয়েছিলাম—সেই নরম স্পর্শ, যা শরতের উত্তাপ পুড়িয়ে দিয়ে শান্তির স্বপ্ন দেখায়।

আমি বৃষ্টি হতে চেয়েছিলাম—শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা ধূলিকণার মাঝে মিশে যেতে, যেখানে প্রতিটি পাথরের স্তরে জমে থাকে অজানা গল্প। রাতের আকাশ ভেঙে পড়েছিল মেঘের গর্জনে, আর আমি চেয়ে দেখছিলাম—কীভাবে অসংখ্য বিন্দু নেমে আসে, যেন নতুন কোনো জন্মের শুরু বা প্রাচীন কোনো স্মৃতির জাগরণ। আমি বৃষ্টি হতে চেয়েছিলাম—
একটি ফোঁটা, একটা বিন্দু, যা সমস্ত ক্লান্তিকে মুছে দিয়ে অদৃশ্য কোনো পথ তৈরি করবে।

বৃষ্টির শব্দ শুনতে চেয়েছিলাম। এক বিন্দু নিস্তব্ধতার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, যেন বৃষ্টি এসে বলবে, "এবার তোমার পালা, শহরকে জাগিয়ে দাও।" কিন্তু আকাশের গর্জন থেমে থাকত, আমার ইচ্ছেগুলো বালুচরের মতো বাতাসে হারিয়ে যেত। আমি ভাবতাম, যদি বৃষ্টি হতে পারতাম, তবে সমস্ত শুষ্কতা মুছে দিতে পারতাম।

আমি বৃষ্টি হতে চেয়েছিলাম, আর সেই সাথে হতে চেয়েছিলাম ছায়া—যেখানে দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টির জল আমার শরীরে খুঁজে নিতো অমৃতের স্বাদ। পৃথিবীর বুক থেকে এক অজানা আহ্বান ভেসে আসত, প্রতিটি বিন্দুর মাঝে যেন রয়েছে শাশ্বত শান্তি। বৃষ্টি হলে আমি ছুটে যেতে পারতাম ধানক্ষেতের সীমানা পেরিয়ে, যেখানে সবুজ গন্ধে ভরে ওঠে সমস্ত শূন্যতা।

আমি বৃষ্টি হতে চেয়েছিলাম, কারণ জীবনের রং হারিয়ে গেছে। আকাশে কালো মেঘ জমেছে, কিন্তু তারা কেবল দুঃখের বার্তা নিয়ে আসে, আর আমি চেয়েছিলাম সেই মেঘগুলো ভেদ করে ছুটে যেতে। জীবনানন্দের মতো আমি অনুভব করেছিলাম, পৃথিবীর প্রতিটি ধূলিকণায়, প্রতিটি শ্বাসে বৃষ্টির স্পর্শ মিশে আছে।

তোমার হাতের ছোঁয়া বৃষ্টির মতো ছিল—নীরব অথচ প্রবল। আমি সেই বৃষ্টির স্মৃতিতে বাস করি, যেখানে এক ফোঁটা জল সমস্ত দুঃখকে মুছে দেয়। পৃথিবীর বুকে ধীরে ধীরে নেমে আসা বৃষ্টির বিন্দুগুলো আজও আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন তারা আমাকে খুঁজছে।

বৃষ্টির বিন্দুগুলো মিশে যেতে চেয়েছিল আমার ভেতরে, আর আমি ভেবেছিলাম, যদি আমি বৃষ্টি হতে পারতাম, সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে ফেলে নতুন একটি পৃথিবী গড়ে তুলতাম। তবুও, আকাশে কালো মেঘ জমেছিল, আর আমি কেবল বৃষ্টি হতে চেয়ে অপেক্ষায় রয়ে গেলাম।