আমি রোজ মৃত্যুবরণ করি—
যেন সন্ধ্যার বুকে হারিয়ে যাওয়া এক ঝাঁক পাখির মতো,
আবার জীবিত হই—তোমার চোখের পাতা বেয়ে নেমে আসা ভোরের শিশিরে।
একদিন কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছিলাম মন—
তখন কি তুমি জানতে?
তোমার কণ্ঠস্বরে তখনও জন্ম নেয়নি ব্যথার প্রথম শব্দে।
জীবনের পথ এতই বিষণ্ণ যে,
কখনও কখনও নীল আকাশটাও থমকে যায়—
অবশ হয়ে পড়ে।
তারপর উড়ে আসে কিছু অদৃশ্য স্বপ্ন—
আমি দেখি সেগুলো মাটির কাছে নামতে গিয়ে হারিয়ে যায়।
আমি তাদের বুকে রেখে আসি একটা একটা কষ্ট—
যেন নতুন মৃত্যুর পরশ, নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি।
মাটির ঘ্রাণে আজও লেগে আছে শৈশবের মেঠো পথ,
যেখানে হারিয়ে গিয়েছিলাম সেইসব দুপুরবেলা।
মনে হয়, কুয়াশার ভেতর দিয়ে হেঁটে আসছে প্রাচীনকালের কোনও ঘুমন্ত কবি,
তার হাতে চাঁদের আলো আর অন্ধকারের মন্ত্র।
আমার বুকের ভেতর তখনই যেন ঝরে পড়ে
ঝরা পাতার মতো ক্লান্তির ছাপ।
কখনও তোমার নাম ধরে ডাকি—
তুমি কি শুনতে পাও?
তোমার চিবুকের কাছে স্থির হয়ে থাকা যে বিষণ্ণতা,
তারা কি আমার মৃত্যুর দিনগুলো ধরে রাখতে চায়?
যতবার তোমার দিকে ফিরে আসি,
ততবার পৃথিবীকে নতুন করে আবিষ্কার করি—
একটা আলোকিত ঘাসের স্তর,
একটা পাখির তিরতিরে উড়াল,
একটা অদ্ভুত নীল আকাশ।
আমি মৃত্যুর পরও দেখি—
গোধূলির মেঘগুলো রক্তিম আলোর ছায়া ফেলে যায় বুকের গহ্বরে।
সন্ধ্যা আমাকে মুছে দেয়, ভোর আমাকে গড়ে তোলে।
কেউ জানে না—
আমি কতবার ঝরে পড়েছি তোমার অভিমানের কাছে,
ততবার আবারো দাঁড়িয়েছি শূন্যে ভর করে।
তুমি যদি জানাতে—
মৃত্যু কেমন করে এসে বসে পড়ে আমার চৌকাঠে,
মাথার পাশে।
তবে আমার জীবনের ঘুমগুলো হয়তো আরও গাঢ় হত।
কিন্তু তুমি শুধু হাসো—
তোমার হাসির মাঝে এক অমোঘ বেদনার রেখা পড়ে।
আমি সেই রেখায় খুঁজে পাই নিজের ছায়া।
তোমার চোখে যে নদী বয়ে চলে—
তারই তীরে দাঁড়িয়ে আমি বারবার হারাই নিজের মুখ।
তোমার কাছে ফিরে আসা মানে আবার জীবনের ঘ্রাণ পাওয়া।
কখনও কখনও মনে হয়—
জীবনের মাঝেই লুকিয়ে থাকে ছোট ছোট মৃত্যুরহস্য।
আজও রাত নামে, আজও ভোর হয়—
আমার বুকের ভেতর যেন জ্বলে ওঠে অগ্নিশিখার মতো শব্দেরা।
আমি কবিতার পাতা বেয়ে নেমে আসা অন্ধকারে—
গা ভাসাই।
সেখানে আমি রোজ মৃত্যুবরণ করি,
আবার তোমার চোখের ভিতর বসন্ত হয়ে উঠি।