জীবন, যেন ঝরে যাওয়া মোমবাতি,
জ্বলতে জ্বলতে আলো কমে আসে,
ফুরিয়ে যায় প্রতীক্ষা।
অধরা চাঁদ এক বিষণ্ণ ধ্রুবতারা,
মেঘের আঁচলে মুখ লুকিয়ে
অগোচরে বিলীন হয়ে যায়—শূন্যতার সাক্ষী।
রাতের বাতাসে ভাসে ফিসফিস শব্দ,
ফেলে আসা স্বপ্নেরা দলাপাকায়
অশথ পাতার ভাঁজে,
সেই ম্লান আলোয় লুকিয়ে থাকা
অজানা বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায় হৃদয়।
পথের ধারে বিবর্ণ ঘাসের উপর
নেমে আসে নিঃস্তব্ধতা,
যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো সুর—
অর্ধেক জ্বলে থাকা প্রদীপের মতো
একটা মুখ, আধো আলোয় ঢাকা।
একটা ডাক শুনেছিলাম আমি,
সেই অনন্তের অতল থেকে—
যেখানে শব্দেরা থেমে যায়,
মৃত্যুর ছায়ায় স্তব্ধ সময়,
ফিরে আসে না আর কোনো প্রতিধ্বনি।
তবুও, জীবন থেমে থাকে না,
শেষ সীমারেখা ছুঁয়ে চলতে থাকে—
নিস্তব্ধ ভূমিরঙ্গে আঁকা ক্লান্তির রেখা,
মৃত্তিকার মতো গভীর,
একটা শেষ আশার আলো জেগে থাকে।
পাহাড়ের পেছনে সূর্য ফ্যাকাসে হয়ে যায়,
রক্তাক্ত আকাশের শেষ আলোকরেখা
ধীরে মিশে যায় অন্ধকারে।
তবু হাওয়ায় জেগে থাকে—
জীবনের শূন্যতায় হারিয়ে যাওয়া এক মৃদু স্পন্দন।
স্মৃতির পাথরে আঁকা কিছু অব্যক্ত শব্দ,
কিছু অসমাপ্ত কবিতার ছেঁড়া ছন্দ—
অর্ধেক ছায়া আর আধখানা আলো,
সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে
ম্লান হতে থাকে ক্রমশ।
তবু, রাত শেষে আসে ভোর,
শীতল শিশিরে ধুয়ে যায় ক্লান্তি,
মেঘের ভার গলে পড়ে
কোনো এক বিস্মৃত প্রান্তরের গভীরে।
জীবন যেন এক বিরতিহীন স্রোত,
সমুদ্রের ঢেউয়ে বাঁধা নিঃশব্দ গান,
একটা শূন্য ঘর—
যেখানে ঘুমিয়ে থাকে
শেষ প্রহরের অশ্রুবিন্দু।
হয়তো শেষ সুঁতোয় বাঁধা
একটা অসমাপ্ত সন্ধ্যার গল্প,
অথবা, ভাঙা ছায়ার নিচে
চুপচাপ আত্মসমর্পণ করে।
এইভাবে ক্ষয়,
এইভাবে নিঃশেষ,
তবুও অন্ধকারের বুক চিরে
রয়ে যায়—
অধরা চাঁদের আলো,
আর এক চিলতে জীবনের শেষ আশ্বাস।