আসলে মাস্তানদের কোনো শিকড় নেই। আছে নির্বোধ শিশুদের মতো মুখের জোর। আপনি যদি কোনো অপরাধ কর্মে স্বেচ্ছায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না-হয়ে থাকেন তো, --মাস্তানরা শুধু ভয় নয়, রীতিমতো আপনাকে শ্রদ্ধা করে যেতে বাধ্য।
কেউ আপনার সাথে মাস্তানি করতে এলে ওর ওপর চটে যাবেন না কিংবা ওকে ওর ঐ অবস্থায় ভয় দেখাবেন না। কেউ মাস্তানি প্রদর্শন করছে মনে হলে, তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে তাৎক্ষণিক ভাবে ব্যস্ত না-হয়ে আপনাকে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে, আর সেটি হচ্ছে, --আপনাকে কমপক্ষে একটি এবং অনতিরিক্ত চারটি বাক্য ব্যয় করতে হবে। আপনি প্রথম সুযোগেই ভদ্রভাবে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, --'তোমার বাবার নামটা যেন কি?',--বলামাত্রই যদি দেখেন যে, এই প্রশ্নটিতে তার মাস্তানি বেড়ে যাচ্ছে, তক্ষুনি ছুড়ে দিন দ্বিতীয় বাক্যটি,--'সম্ভবত আমি চিনি, -যথেষ্ট ভদ্রলোক তিনি, আমরা তাকে শ্রদ্ধাও করি--'। সে থেমে যাবে যদিও তার সঙ্গের চ্যালারা তখনো সতেজ। ঝাঁজালো চ্যালাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলবেন,--'তিনি কোথাও কোনোভাবে অশ্রদ্ধার পাত্র হবেন, এটা নিশ্চয়ই আমরা কেউ চাইবো না।'
সাধারণত চতুর্থ বাক্যটির প্রয়োজন হয় না। তৃতীয়টির পরও যদি দেখেন যে, ওরা নেড়ি-কুত্তার মতো লেজ গুটিয়ে ভয়ে ভয়ে সরে পড়েনি, --তখন সকলের উদ্দেশে একটুখানি উচ্চৈঃস্বরে, যেন কুড়ি হাত দূরের জনও স্পষ্ট শুনতে পায় এমনভাবে আপনার শেষ বাক্যটি,--'আমি শুধু আমার ভয়েই মরি, --প্রতিনিমেষে মরণ বহন করি,'-বাক্যটি ছুড়ে দিলে দেখবেন, --'ঠিক আছে, দেখে নেবো,--' কিংবা, --'এই চল, এ ব্যাটা দারুণ সেয়ানা,' --বলতে বলতে তারা সটাসট কেটে পড়বে। ভয় পাবেন না, --'দেখে নেবো' বলা পর্যন্তই ওদের দৌড়। আপনাকে দেখে নেওয়া দূরের কথা, পরবর্তীতে কখনো শখের বশে আপনি যদি ওদেরকে একত্রে দেখতে চান তো, --ডেকে ডেকেও ওদের নাগাল পাবেন না এবং কালে-ভদ্রে কোথাও যদিও বা ওদের কারো সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় তো দেখবেন, সে শ্রদ্ধাভরে আপনার জন্যে উপকারী একজন হয়ে মাথা নিচু অবস্থায় আপনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
মোটেও কমিয়ে বা বাড়িয়ে বলা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা, --আমার কাছে নিত্য প্রমাণিত। তাই অন্তত আমি ওদেরকে ঘৃণা করতে পারি না। সৎসাহস থাকলে আপনিও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
আমি আমার মজবুত ভিত্তি পেয়েছি, কিন্তু ওদের কোনো শেকড় নেই। ওদের আজকের দশার জন্যে আপনারাও দায়ী কি-না জানি না, তবে আমি যে অনেকাংশেই দায়ী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
রঙ্গপুর : --২০/০৫/২০১০