শরৎ এর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, বর্ষার রেশ কাটেনি, ডুবন্ত বাংলার নদীনালা, ঊঠানের জল তর তর করে ঘরে ঢুকে পরছে, ঠাকুমার কপালে ভীষন চিন্তার ভাঁজ, ঘরে গর্ভবর্তী পুত্রবধু, দিনকাল ঘনিয়ে এসেছে, কি হয় ! কি হয় ! বানে ডাকা ভরা জোয়ার জলের মধ্যেই চৌকির উপর মাঙ্গলিক স্নিগ্ধ প্রভাতে ভৌমিক বাড়ীর উঠানে শোনা গেল এক নবজাতক/ শিশুর চিৎকার । সঙ্গে সঙ্গে সারা বাড়ী/পাড়ায় আনন্দের শোরগোল পরে যায় । বহুদিন পর এ বাড়ীতে শিশুর আগমন । বাড়ীর বড় ছেলের সন্তান বলে কথা । এভাবেই জলের উপরে কাঠের চৌকিতে দিনে দিনে বাড়তে থাকে সেই শিশুটি, ছয় দিন পরে নাম দেয়া প্রয়োজন । সে কি চিন্তা ভাবনা ! ঠাকুমা বলছে, আমার গৌর এসেছে আমি তাকে গৌরাঙ্গ বলেই ডাকব, সঙ্গে সঙে সকলে , সকল আত্মীয় স্বজন মিলে তাতেই সায় দিল । এভাবেই দিনে দিনে বাড়ছিল গৌরাঙ্গ । বছর তিনেক পরে যখন স্কুলের ডাক পরল, বাবা ভাবলেন ছেলের এ নামটা তো বড্ড সেকেলে, তার চাইতে আমার মনে মনে পোষে রাখা নামেই দেয়া যাক স্কুলে । সেই থেক আজ অবদি বাড়ছে শিশু, কিশোর হল, এখন বুজি যৌবনেরও শেষ প্রান্তে । কেউবা ডাকে গৌর বলে, কেঊবা গৌরাঙ্গ, আবার খেলার মাঠে ডাকে শুধু "গৌরা" । হঠাৎ করেই কৈশোরে ঠাকুর দা চলে গেলে, জীবনের হল পট পরিবর্তন । অজানা অচেনা গাঁয়ে ঠিকানার বদলিয়ে ঠাকুমার দেয়া নামটা আটকে গেল শুধুই ঘরের কোনে, বাবার দেওয়া কাগুজে নামটাকে উজ্বল করার প্রয়াসে চলছিল যখন একেবারে চিন্তামুক্ত পদচারনা শিক্ষায়, সংস্কৃতি, খেলাধুলায় ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে ঠিক তখনি যেন অকস্মাৎ সচলতার আলোটা গেল নিভে । এবারে শুরু হল যুদ্ধ, বেঁচে থাকার যুদ্ধ, বেড়ে ঊঠার যুদ্ধ, বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ, বাড়িয়ে তোলার যুদ্ধ । যুদ্ধের অগ্রনী সৈনিক হয়ে বুক চিতিয়ে এগিয়ে যাবার নাম জীবন - এই যখন জীবনের অভিজ্ঞতা, এই যখন জন্মের মাহাত্ম, এই যখন পৃথিবীর বুকে প্রকৃতির নিয়ম বলে জানতে জানতে এগিয়ে যাচ্ছিল ; অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট ভাই বোনের পড়াশুনা, অতি বয়স্কা ঠাকুমার ঔষধের যোগার করতে করতে কখনো কখনো জীর্ণ শীর্ণ মায়ের দিকে চোখ পড়লে কান্নায় ভেঙ্গে পরতে পরতেই আবার জেগে ঊঠত নতুন উদ্যমে ।  -----ক্রমশঃ ।