বিদায়
✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য


দিনের আলো নিভে গেলো
আঁধার এলো আঁখির পাতায়,
চলতে গিয়ে পড়েছি লুটিয়ে
হে-বন্ধু’ আজ দাও গো বিদায়।
ওই দূর থেকে যদি ডাক আসে
যেতে হবে ওরে সকলকে,
মিছে মায়ায় বাঁধিস না আমায়
কাল যাত্রায় যেতেদে আমাকে।
ভালোই তো আছিস-ভুলেছিস,
ভুলতে কেন তোকে আমি পারিনি?
সকাল-সন্ধ্যা-রজনী এলে ডুবি
প্রেম নিতলে, নিস্তব্ধ ঘিরে ধরে
মনকে বাঁধতে পারিনি।
ভেবেছি বহুবার ভুলে যাবো এবার,
তবে ভুলবো কি করে বল?
রোজ বিকেলে পশ্চিম আকাশে তাকালে,
রঙিন স্মৃতি নয়নে আনে অশ্রুজল।


বলতে পারিস, কতদিন দুজনের
হয়না কথা?
হৃদয়ে করি শুধু ব্যর্থতা অনুভব!
সেই কবে তোর বিবাহ হলো
বয়স তখন একুশ ছিল,
আর হয়নি দেখা করা সম্ভব!
সেই থেকে ছেড়েছি সব
থেমেছে পাখির কলরব,
কাজ-কর্ম হীন দুর্ভিক্ষ দুর্দিন বৃথা জীবন!
কত ফোটে প্রভাতি ফুল
আমি খুঁজি ঝরা বকুল,
চেনা গন্ধ ধরে ছুটি অনন্ত পথে সর্বক্ষণ।
আজ চরণ ক্ষত হয়েছি নত
বিরহে বুকে রক্ত ঝরে,
কেড়ে নিলি প্রাণ- কি দেব দান?
আছি পথে পড়ে মরে।
দেখলে তুই চিনতে পারবি,
পাগল বলবি না তো?
লম্বা চুলে মুখ ঢেকেছে,
ধূলি আসনে বসে করি প্রেম ব্রত।


আরে কোথায় যাচ্ছিস,
ভয় কেন পাচ্ছিস আমায় দেখে?
কতদিন পরে পদ রেখেছিস আমার উপরে
আনন্দে তাই হেসে যাই অনন্ত প্রেম সুখে।
কেমন আছিস? তুই কাঁদছিস?
খুঁজছি তোকে অযুত বছর ধরে!
শেষের দিনে এসেছিস কুঞ্জকাননে,
কি দিয়ে স্বগত জানাবো তরে?
জানি, আছে তোর কত আপন স্বজন
রূপে-লাবণ্যে অনন্য এখন,
সেদিন-ও ছিলে অনন্ত যৌবনা তুমি তিলোত্তমা!
আমি নাকি ভাঙা ঘরের জ্বলন্ত প্রদীপ,
বলতো আমার মা-কাকিমা।
আজ মা আমার স্বপ্ন দেখে না আর
নিদ্রিত নয়নে পথ চলতে ব্যস্ত,
দগ্ধ শ্মশানে জ্বলছে সর্বক্ষণে
আমার কবিতায় সে খোঁজে অমরত্ব।


কিন্তু কবিতা, পালন করে নীরবতা-
অপ্রকাশে-অন্ধকারে!
প্রাণ দেওয়া হয়নি বলে
কাগজ হয়ে রইলো কোলে,
তুই সব আগুন জ্বালিয়ে দেনা কয়লা করে।
রিক্ত পকেট ক্ষুধার্ত পেট
ঝড়ো মেঘে বৃষ্টি আনে,
গরীবের আবার জীবন কোথায়?
কিসের মৃত্যু, কিসের ক্ষয়?
ঘুমিয়ে আছে বাবা বনে অকারণে।
এখন আমি খাদ্য এনে যাই সেখানে
ঘাসের উপর লুটিয়ে পড়ি,
বাবা বলে পাগল ছেলে আয় না চলে
কিসের মায়ায় করিস এত বাড়াবাড়ি?
তুই আর আমি দুজনে একা,
বকার মত থাকি নীরব-নির্জনে!
তুই আসলে কাছে বন্ধু হবো,
কিসের আশায় আছিস ভুবনে?


হে-বন্ধু, তোর কি মনে আছে
কাটিয়েছি সুন্দর মুহূর্ত কত দুজনে?
স্মৃতি ঘেরা বসন্ত বিকেলের দিনে,
প্রেম জেগে ওঠে আমার তৃষিত মনে।
কত কবিতা লিখেছি, ভালবেসেছি,
প্রেমে পথ হারিয়েছি কৃষ্ণচূড়া বনে!
কোনদিন ভেবেছিলি
আমি দেবো অন্তর-অঞ্জলি,
প্রেমের পূজায় তোর চরণে?
আজও দান দিয়েছিস ভিক্ষারী ভেবে,
চিনতে আর পারলি কবে?
বেলা শেষে বিদায় নিতে এসেছি রে দ্বারে!
যদি কোনদিন মনে পড়ে খুঁজিস স্মৃতির ভিড়ে
কবিতায় ইতি টেনেছি এবার ভালো থাকিস ওরে।



✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
রচনাকাল, ১৮ মে ২০২০ সাল,
বাংলা-৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, সোমবার।
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।