ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৯, ভাগ-৯০> – কবিতার বিষয়শ্রেণি
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – নীতিমূলক ও অন্যান্য কবিতা
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি কণিকা সরকার মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
নীতিমূলক ও অন্যান্য কবিতা
যে কবিতায় কিছু নীতি বা আদর্শ রচিত হয়, তাই নীতি কবিতা। এর মধ্যে সমাজের কিছু নির্মমসত্য উঠে আসে। কবিবৃন্দ নানা উপায়ে সমাজের সেই সব ঘটনা রূপকের সাহায্যে সরলভাবে তুলে ধরেন। এর মধ্যে একদিকে থাকে আদর্শবোধ, অন্যদিকে সুস্থ নীতির পরিচায়ক। আরও অনেক বিষয়ে কবিতা রচিত হলেও মূল এই দশটি পর্বে কবিতার শ্রেণিবিন্যাস করা হল। নীচে তার মধ্যে কতিপয় কবিতা তুলে ধরা হল।

১) ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-(বলাকা )
ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা,
     ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,
     আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।
রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে
আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,
সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ ক'রে
     পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।
     আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

খাঁচাখানা দুলছে মৃদু হাওয়ায়;
     আর তো কিছুই নড়ে না রে
     ওদের ঘরে, ওদের ঘরের দাওয়ায়।
ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা,
চক্ষুকর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা,
ঝিমায় যেন চিত্রপটে আঁকা
     অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায়।
     আয় জীবন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।(সংক্ষেপিত)


২) সেই ছেলে হবে কবে- মুহম্মদ জাফর ইকবাল- (ভয় কিংবা ভালোবাসা )
আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে
যারা কোথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।


তর্ক না করে তারা কিলঘুষি দেবে
চোখের পলকে সব কেড়ে ধরে নেবে।
লাঠির আঘাতে তারা মাথা ফাটাবে
শার্টের কলার ধরে পথে হাঁটাবে।
অপমান করে তারা লোক হাসাবে
চাকু দিয়ে ঘা মেরে ভুঁড়ি ফাঁসাবে।


আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে
যাদের ভয়ে সব ঘরেতে রবে।


৩) পারো তো ধর্ষণ করো- তসলিমা নাসরিন---(কিছুক্ষণ থাকো )
আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না
আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে
কোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল।
আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,
আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ
পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে।
             -----------------
ধর্ষিতা হয়ো না,পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,
পতিত করো, পয়মাল করো
পারো তো ধর্ষণ করো,
পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করো।
লোকে বলবে, ছি ছি, বলুক।
লোকে বলবে এমন কী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতই,
বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভালো নও
বলুক, কিছুতে কান দিও না, তোমার ভালো হওয়ার দরকার নেই,
শত সহস্র বছর তুমি ভালো ছিলে মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও।


চলো সবাই মিলে আমরা মন্দ হই,
মন্দ হওয়ার মত ভালো আর কী আছে কোথায়!


৪)অভিবাদন- সুকান্ত ভট্টাচার্য---(ঘুম নেই )
হে সাথী, আজকে স্বপ্নের দিন গোনা
ব্যর্থ নয় তো, বিপুল সম্ভাবনা
দিকে দিকে উদ্যাপন করছে লগ্ন,
পৃথিবী সূর্য-তপস্যাতেই মগ্ন।


আজকে সামনে নিরুচ্চারিত প্রশ্ন,
মনের কোমল মহল ঘিরে কবোষ্ণ
ক্রমশ পুষ্ট মিলিত উন্মাদনা,
ক্রমশ সফল স্বপ্নের দিন গোনা।


স্বপ্নের বীজ বপন করেছি সদ্য,
বিদ্যুৎবেগে ফসল সংঘবদ্ধ!
হে সাথী, ফসলে শুনেছো প্রাণের গান?
দুরন্ত হাওয়া ছড়ায় ঐকতান।


বন্ধু, আজকে দোদুল্যমান পৃথ্বী
আমরা গঠন করব নতুন ভিত্তি;
তারই সুত্রপাতকে করেছি সাধন
হে সাথী, আজকে রক্তিম অভিবাদন।।


৫) আমাদের নারী- কাজী নজরুল ইসলাম—(-সংকলিত -কাজী নজরুল ইসলাম)
গুনে গরিমায় আমাদের নারী আদর্শ দুনিয়ায়।
রূপে লাবন্যে মাধুরী ও শ্রীতে হুরী পরী লাজ পায়।।
নর নহে, নারী ইসলাম পরে প্রথম আনে ঈমান,
আম্মা খাদিজা জগতে সর্ব-প্রথম মুসলমান,
পুরুষের সব গৌরবস্নান এক এই  মহিমায়।।
নবী নন্দিনী ফাতেমা মোদের সতী নারীদের রাণী,
যাঁর ত্যাগ সেবা স্নেহ ছিল মরূভুমে কওসর পানি,
যাঁর গুণ-গাথা ঘরে ঘরে প্রতি  নর-নারী আজো গায়।।
রহিমার মত মহিমা কাহার, তাঁর সম সতী কেবা,
নারী নয় যেন মূর্তি ধরিয়া এসেছিল পতি সেবা
মোদের খাওয়ালা জগতের আলা বীরত্বে গরিমায়।।
রাজ্য শাসনের রিজিয়ার নাম ইতিহাসে অক্ষয়,
শৌর্যে সাহসে চাঁদ সুলতানা বিশ্বের বিস্ময়।
জেবুন্নেসার তুলনায় কোথায় জ্ঞানের তাপস্যার।।
বারো বছরের বালিকা লায়লা ওহাবীব দলপতি
মোদের সাকিনা জাহানারা যেন ধৈর্য মূর্তিমতী,
সে গৌরবের গোর হয়ে গেছে আঁধারের বোরকায়।।
আঁধার হেরেমে বন্দিনী হলো সহসা আলোর মেয়ে,
সেই দিন হতে ইসলাম গেল গ্লানির কালিতে ছেয়ে
লক্ষ খালিদা আসিবে, যদি এ নারীরা মুক্তি পায়।।


৬) উত্তম ও অধম- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত--- (সংকলিত)
কুকুর আসিয়া এমন কামড়
দিল পথিকের পায়
কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
বিষ লেগে গেল তাই।
ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
বিষম ব্যথায় জাগে,
মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
জাগে শিয়রের আগে।
বাপেরে সে বলে র্ভৎসনা ছলে
কপালে রাখিয়া হাত,
তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
তোমার কি নাই দাতঁ?
কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
“তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়ে
দংশি কেমন করে?”
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়,
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে
মানুষের শোভা পায়?
**সংযোজিত হবে।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা কবিতার আসর
                    ২) ইন্টারনেট।
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।