মাথাটা ঘুরছে- নেশাখোরের মাথাটা যেমন ঘোরে।
চোখ দুটো আঁটকে গ্যাছে আকাশের সীমানায়,
যেখানে এক ঝাঁক পানকৌড়ি চলতে গিয়ে থমকে গিয়েছে।
আমি যে গাছের গুঁড়ির উপর বসে আছি,
সেই গাছের প্রতিটা ডালে ডালে বাসা ছিলো,
মোটামুটি অনেকগুলো বাসা।
অনেক হলে কি হবে?
প্রত্যেকের জন্য একটি করেই মাত্র,ছ ঋতুর সম্বল আর কি।
তবে একটা কথা না বললেই নয়,
সেখানে একটাই মাত্র পরিবার ছিলো।
অবশ্য পরিবার বললে ভুল হবে,একটা পৃথিবী ছিলো,আদর্শ পৃথিবী,যেমন পৃথিবীর কথা বলে আজকালকার পরিবেশবিদরা।
আর এই পৃথিবীর বাসিন্দারা হলো ঐ থমলে থাকা পানকৌড়ির দল।
আর আমি হচ্ছি একমাত্র এলিয়েন জাতীয় কিছু,
এমনটাই হয়তো তাদের ভাবনা।


তাদের সাথে আমার বড় সখ্যতা ছিলো,
সেটা ঐ নদীই ভালো জানে কারণ পানকৌড় নদী আর আমার ছিলো নিষ্পলক চোখাচোখি।
খুব ভোরেই পানকৌড়ি গুলো মিষ্টি হেসে দৃষ্টি ফেলে যেতো,
আর আমি সেই দৃষ্টি ছড়িয়ে দিতাম ঐ নদীর বলয়ে,
মাঝি, নৌকা, ছেঁড়া পাল, ভাসমান শ্যাওলায়।
সবাই বয়ে চলতো, পানকৌড়ি চলতো,নদী চলতো।
শুধু চলতাম না আমি আর আমার ছাঁয়া গাছ,
যে গাছের গুঁড়ির উপর আমি বসে আছি।


আমি একটা ধ্বংস পৃথিবীর ভগ্নাংশের উপর বসে আছি,
ধ্বংস পৃথিবীর বাসিন্দাকে দেখছি
ফোটায় ফোটায় জল ফেলছে নদীর বুকে,
এ জল অশ্রু ছাড়া কিছুই নয়,
বিগত দিনের ফেলে যাওয়া সুখের জল আর অদ্যকার জলের বিভেদ আমি বুঝি।
আর নদীটাও সব জল গোগ্রাসে পান করছে,
মনে হচ্ছে এখন তার অন্তিম পিপাসার মুহুর্ত।


পানকৌড়ি গুলো কাঁদতে কাঁদতে অশ্রুশুন্য হয়তো একদিন মারা যাবে,
যেমন করে মারা গ্যাছে গাছ,মরছে নদী,
যার একমাত্র রাজসাক্ষী আমি নিজেই,
দেখেছি, বুঝেছি ধ্বংস ক্যামন, ক্যামন তার পরিনাম।


কিন্তু যে দিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধ্বংসকে সম্বল করে সমস্ত পৃথিবী নিঃশেষ হবে,
সে দিন আমাদেরও অশ্রু ঝরবে,পিপাসা বাড়বে,মৃত্যু হবে।
কিন্তু মহা পরিতাপ,আফসোস করার জন্যও থাকবে না কেউ!