। স্তন।


শিল্পী এক জোড়া স্তন আঁকলেন। বৃন্ত থেকে চুঁইয়ে পড়ছে দুধের ফোঁটা,
যেন এক শিশুর ঠোঁটের অপেক্ষায়।
দর্শক মুগ্ধ চোখে দেখে বললো , মা!
সমালোচক বললেন, গতানুগতিক।


শিল্পী তুলি দিয়ে ঝটিতি বদল করলেন। দুধের ফোঁটা মুছে এঁকে দিলেন রক্তিম আদরের দাগ,
আভাস দিলেন বিশ্রস্ত কাঁচুলির।
দর্শক দর্শকাম লুকানোর চেষ্টা করতে বলে উঠলো
উদ্দীপক!
সমালোচক ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন সস্তায় নাম কেনার চেষ্টা।


শিল্পী আবার বদলে দিলেন ছবিটা।
আদরের দাগ বদলে গেলো কালির পোঁচে ,
পুরু ময়লার আস্তরণ দৃশ্যমানকে করে তুললো অস্বস্তিকর।
ক্লিভেজে আটকানো কিছু রুটির টুকরো, ওপরে অদৃশ্য জিভ থেকে লালা চুঁইয়ে পড়ছে সামনে দিয়ে।
দর্শক চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো এ তো রাস্তার সেই পাগলীটা।
সমালোচক বললেন, দুরবস্থার ফায়দা ওঠানো হচ্ছে ভালোই।


শিল্পীর তুলির টান থামলো না।
স্তনের ওপরে দেখা দিলো আঁচড় কামড়ের দাগ,
একখানা বৃন্ত প্রায় ওপড়ানো, ভেতরের লালচে হলুদ উঁকি মারছে থকথকে জমে থাকা রক্তের মাঝে।
দর্শক বললেন, আর দেখা যাচ্ছে না! এ যে গণধর্ষিতা!
সমালোচক বললেন, কারো সর্বনাশ, কারো পৌষমাস।


শিল্পী আবার ইজেলে হাত চালালেন।
একখানি স্তন থেকে ফেটে বেরোলো এক ভয়ঙ্কর ঘা,
আশেপাশের চামড়াকে যা টেনে নিয়েছে ভেতরে।
একটা স্ক্যালপেল ধরা গ্লাভস পরা হাত উদ্যত তাকে কাটতে,
আর অন্য স্তনটির বৃন্তকে ঘিরে উঠছে এক নতুন সূর্য,
যার রোদে আলোকিত বাকি চিত্রটি।
দর্শক চোখের জল মুছতে মুছতে বললো মৃত্যুর থেকে জীবনে ফেরা।
সমালোচক বললেন, অমুক হাসপাতালের বিজ্ঞাপন।


চোখে ঝিলিক এনে শিল্পী সব ক্ষত মুছে
আবার এঁকে ফেললেন দুটি নিটোল নিখুঁত স্তন,
আর তাদের ঠিক মাঝে, অতি মনোযোগ সহকারে এঁকে দিলেন এক তৃতীয় নয়ন ।
দর্শক দুহাত মাথায় ঠেকিয়ে বললো, দেবীই মানবী অথবা মানবীই দেবী।
সমালোচক বললেন, ধর্ম নিয়ে খেলা! দেখাচ্ছি মজা।


ছবি শেষ করে ক্লান্ত শিল্পী মৃদুস্বরে বললেন,
আসলে কিছুটা রঙ, কাগজ আর তুলি ।
বাদবাকি সবই কল্পনা।


দর্শক বললো, ম্যাজিক কার্পেট সেটা আমাদের কাছে,
তুলি দিয়ে যার সব মায়াসুতো বোনা।


সমালোচক কী বললেন, সেটা আর কেউ শুনলো না।


আর্যতীর্থ